সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মসূচিতে কাজ করে অনেক দরিদ্র ব্যক্তিই টাকা পাননি। অল্প কয়েকজন টাকা পেলেও পুরো আট হাজার টাকা পাননি। বেশির ভাগ টাকাই ভুয়া ব্যক্তিকে উপকারভোগী সাজিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। দরিদ্রদের দিয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও একটি প্রকল্পে ঠিকাদারকে দিয়ে নিম্নমানের কাজ করানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোয়াংছড়ির চারটি ইউনিয়নের অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার ৪০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ জন্য রাস্তা, বাঁধ নির্মাণ, স্কুলের মাঠ সংস্কার ও বৌদ্ধবিহারের মাটি কাটার জন্য ১১টি প্রকল্প নেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অতিদরিদ্রদের বাছাই করে কাজ বাবদ প্রতিদিন ২০০ টাকা হিসেবে একেকজনের আট হাজার টাকা পাওয়ার কথা। এই প্রকল্পের মধ্যে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
এমনই একটি প্রকল্প অংগ্যপাড়া ঝিড়িতে বাঁধ নির্মাণ ও বৌদ্ধবিহারের মাটি কাটা। ওই প্রকল্পে ৫৫ জনকে উপকারভোগী বা কর্মী হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২২ জনের জবকার্ড (উপকারভোগীদের কর্মদিবস ও পারিশ্রমিকের হিসাবপত্র) পাওয়া গেলেও ৩৩ জনের কোনো কার্ড পাওয়া যায়নি। অথচ ৫৫ জনের নামেই সোনালী ব্যাংকের রোয়াংছড়ি শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অংগ্যপাড়ার পাশে বাঁধ নির্মাণ ও বৌদ্ধবিহারের মাটি কাটা হয়েছে। ওই কাজের শ্রমিক ও পাড়ার বাসিন্দা প্রুমেচিং মারমা, রেদাকমা, আমুই মারমাসহ বেশ কয়েকজন জানান, তাঁরা ২২ জন উপকারভোগী বাঁধ নির্মাণ ও মাটি কাটার কাজ করলেও এক টাকাও পাননি।
এ ব্যাপারে কাজের তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অংগ্যপাড়ার বাঁধ নির্মাণ ও মাটি কাটার কাজের পরিবর্তে ঠিকাদার দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ দুই মাস আগে শেষ করা হয়েছে। অভিযোগকারীরা দুই মাস আগে অভিযোগ করলে তাদের প্রাপ্য টাকা অবশ্যই প্রদান করা হতো।’
৩৩ জনের ভুয়া তালিকা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান দাবি করেন, অন্য কর্মীদের পাগলাছড়া থেকে নেওয়া হয়েছে।
পাগলাছড়ায় কর্মী হিসেবে দেখানো শনতা তঞ্চঙ্গ্যা, জয়ন্তি তঞ্চঙ্গ্যাসহ অনেকে বলেন, তাঁদের কাছ থেকে এক কপি করে ছবি নেওয়া হলেও ৪০ দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে তাঁদের কিছু জানা নেই।
রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাহ্লামং মারমা বলেন, ‘আমরা তিন লাখ টাকায় ঠিকাদারের মাধ্যমে রোয়াংছড়ি সদর থেকে অংগ্যপাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ করিয়েছি।’
অথচ এ প্রকল্পে অতিদরিদ্রদের দিয়ে কাজ করানোর কথা। সরেজমিনে গেলে অংগ্যপাড়ায় সামান্য কিছু মাটি ফেলে রাস্তা নির্মাণের কাজ দেখানো হয়েছে।
সদর ইউনিয়নের অন্য তিনটি প্রকল্পের সাতজন উপকারভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, কাজ শেষে তাঁদের আট হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁদের কেউ পাঁচ হাজার, কেউ তিন হাজার, এমনকি এক হাজার টাকা করেও পেয়েছেন। কর্মকর্তারা জাল স্বাক্ষরে তাঁদের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন।
সোনালী ব্যাংক রোয়াংছড়ি শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, উপকারভোগীদের স্বাক্ষর ও টিপসই তাঁদের কাছে উপস্থাপন করার পর তাঁরা ১১টি প্রকল্পের সব টাকা ছাড় করেছেন। দরিদ্রদের হয়রানি কমাতে তাঁরা শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে ওই টাকা দিয়েছেন।
অনিয়মের ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তর্পণ দেওয়ানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর কার্যালয়ে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসমাইল হোসেন বলেন, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে জাল স্বাক্ষর করে টাকা তুলে নেওয়ার কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সৌজন্যে: প্রথম আলো