সিএইচটিনিউজ.কম

দীঘিনালা প্রতিনিধি: কুসুমিকা চাকমা(২৭), স্বামী বিনয় চাকমা। গত ১০ জুন বিজিবি কর্তৃক হামলার পর নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ২১ পরিবারের ৮৪ জনের মধ্যে তিনি একজন। তবে অন্যান্যদের চাইতে তাঁর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। বর্তমানে তিনি সন্তান সম্ভবা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি জন্ম দিতে যাচ্ছেন একটি নতুন প্রজন্মের।
আজ ১৭ আগস্ট রবিবার বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখতে গিয়ে সিএইচটিনিউজ.কমের এই প্রতিবেদকের নিকট তিনি তাঁর দুঃখের কথা তুলে ধরেন।
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘বিজিবি আমাদের ঘর-বাড়ী, জায়গা-জমি সব বেদখল করেছে, চারদিকে কাটাতারের বেড়া দিয়েছে। একমাত্র চলাচলের রাস্তাটিও বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমরা এখন এখানে গোয়াল ঘরের গরুর মত শ্বশুর-ভাসুর, ভাগ্নে-ভাইপুত একসাথে গাদা-গাদি করে বাস করছি। ঠিকমত খাওয়া নেই, শোয়া নেই, গোসল নেই। এ অস্বস্তিকর পরিবেশে আর কতদিন থাকতে হবে জানি না। জানি না কখন নিজ জায়গায়, নিজ বাড়ীতে ফিরে যেতে পারব। বিজিবি কখন চলে যাবে। কখন ফিরে পাবো আমাদের জায়গা জমি।’
তিনি তাঁর শারিরীক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এই দেখুন ক’দিন পরে আমার ডেলিভারী হবে। কিন্তু ঠিকমত চেক-আপ করতে পারছি না। টাকার অভাবে ঠিকমত ঔষধপত্র কিনতে পারছি না। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে? আমি কি দোষ করেছি, আমার অনাগত সন্তানই বা কি দোষ করেছে? আমাকে কেন এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে?’
একজন গর্ভবতী নারীর সন্তান প্রসবের আগে যেসব স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন, কুসুমিকা তার কোনকিছুই পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় খাদ্য-দ্রব্যও। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক টুকরা আলু, দু’একটা কাঁচামরিচ ও সামান্য লবন নিয়ে ভাত খাচ্ছেন কুসুমিকা। তাঁর চেহারা, চোখ-মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যায়, তিনি কতটুকু অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। শ্বশুর-ভাসুর আর ভাগ্নে-ভাইপুতের সাথে একত্রে গাদা গাদি করে সকল লজ্জা মাথায় নিয়েই তাঁকে সেখানে বসবাস করতে হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিবেশে সন্তান জন্ম দেয়ার অধিকারটুকুও তিনি হারিয়েছেন। কত নিষ্ঠুর বাস্তবতার সাথে সংগ্রাম করে অনাগত নিষ্পাপ সন্তানকে জন্ম দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তা দেখলে অবাক হতে হয়।
এই অসহায় নিরীহ মানুষগুলোর প্রতি যেন সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই। এদের নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করাই যেন সরকারের মহান দায়িত্ব। তাই তো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা ও সন্তান জন্মদানের স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে এই অসহায় নারীকে।
———–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।