বিজিবি সদস্যদের সামনেই সেটলাররা আমাদের মারধর করে- সুকুমনি চাকমা
এরপর আরেক দল সেটলার আমাকে জোর করে হোন্ডায় তুলে নিয়ে যাবার সময় গিয়াস উদ্দিনও আমার সাথে হোন্ডায় উঠে বসেন। তানাক্কা পাড়া ক্যাম্পের পাশে এসে পৌছলে তিনি আমাকে হোন্ডা থেকে টেনে নামিয়ে ক্যাম্পে তুলে দিয়ে যান। ক্যাম্পে গিয়ে সাচু নামে একজন সিপাহী ও একজন হাবিলদার আমার হাত থেকে রক্ষক্ষরণ হতে দেখে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন। তারা আমাকে ক্যাম্পে নিরাপদে থাকতে অভয় দেন। বিকাল সাড়ে ৫টার সময় ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার ক্যাম্পে চলে আসলে হাবিলদার ও সিপাহী তার কাছ থেকে ‘যে পাহাড়ি ছেলেকে আমরা রেখেছি তাকে কি করবো’ বলে জিজ্ঞাসা করেন। সুবেদার তখন তাদের বলেন, এ রোজার দিনে এ বিষয়ে আমাকে বলো না। তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো। পরে সুবেদার আমাকে একা একা চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। আমি তাকে বলি স্যার আমি এখন আর একা একা যেতে পারবো না। এখন তারা(সেটলাররা) আমাকে পেলে মেরে ফেলবে। এরপর হাবিলদার ও সাচু নামে সিপাহি আমাকে বলেন, কোন অসুবিধা নেই। বগা পাড়ায় আমাদের টহল রয়েছে। আমাদের সাথেই নিয়ে যাবো। হাবিলদার সাহেব তখন আমার কাছ থেকে জানতে চান যে, বগাপাড়া পর্যন্ত পৌছে দিলে আমি যেতে পারবো কিনা। আমি যেতে পারবো বলে উত্তর দিই। তখন তিনি বলেন, ঠিক আছে, আমরা আগে ইফতার করে নিই। এরপর আমরা আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো। ইফতারের পর তারা আমাকে বগাপাড়ায় পৌছে দেন। তখন রাত প্রায় ১০টা। হাবিলদার আমাকে বলেন, বান্দরশিং ক্যাম্পে আরো ১১ জন পাহাড়ি ছেলে রয়েছেন সেখানে গেলে তাদের নাগাল পাবেন। আমি চিন্তা-ভাবনা করে আর সেদিকে যাইনি। আমি সোজা ভারতের দিকে চলে যাই। রাতের মধ্যে একাই হেঁটে ফেনী নদী পার হয়ে সীমান্তে পৌঁছে সকলকে সেখানে নাগাল পাই। পরদিন বিকাল ৫টার দিকে আমরা গ্রামে ফিরে আসি।
দ্রষ্টব্য: সুকুমনি চাকমার উক্ত সাক্ষাতকারটি যেদিন ধারণ করা হয় সেদিনই তার ২ মাস বয়সী ছেলে আশামনি চাকমাকে অসুস্থ অবস্থায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলায় পালিয়ে যাবার কারণে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আশা মনি চাকমা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের চেষ্টা সত্ত্বেও আশামনি চাকমাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ১০ আগস্ট সে মারা যায়।