বিপুল উত্সাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পিসিপি’র ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
ঢাকা : “গোলামী-লেজুড়বৃত্তি ও আত্মপ্রতিষ্ঠায় জাতির মুক্তি নেই, জাতীয় মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ছাত্র সমাজ জেগে ওঠো” এইশ্লোগানকে সামনে রেখে বিপুল উত্সাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে আজ ২০ মে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকায় সমাবেশ ও র্যালীর আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০:৩০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামানের সহধর্মিনী ও মুক্তিযোদ্ধা প্রফে. এমরিটাস ড. সুলতানা সারওয়াতারা জামান। এ সময় পিসিপি‘র কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা দলীয় পতাকা ও ড. সুলতানা সারওয়াতারা জামান জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
প্রথমে দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান শুরুর আগে পিসিপি‘র ২২ বছরের আপোষহীন লড়াই সংগ্রামে সকল শহীদদের এবং সদ্য প্রয়াত মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এচিং মারমা শোকবার্তা পাঠ করেন এবং শহীদদের সম্মানে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালনকরা হয়।
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেনইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক হাসিবুর রহমান, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নিরূপা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শান্তিদেব চাকমা।অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিমল লংডকিরি, বিপ্লবী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আশীষ শর্মা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের জোট ভূক্ত সংস্কৃতির নয়া সেতুর কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক আধ্যাপক জাহিদ হাসান ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক সামিউল আলম। এছাড়া সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) ও ল্যাম্পপোষ্ট অনুষ্ঠানে সংহতি জানান।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমেন চাকমা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. সুলতানা সারওয়াতারা জামান বলেন, “অনেক জায়গায় আন্দোলন হয়েছে এবং আন্দোলনে সফলতা এসেছে, আপনারাদের আন্দোলন একদিন না একদিন নিশ্চয় সফল হবে। পৃথিবীর অনেক জায়গায় শাসক গোষ্ঠী দাবী মেনে নিয়েছে, বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী কেন মেনে নেবে না। আমার স্বামী আপনাদের সাথে ছিলেন আমিও আপনাদেরসাথে আছি৷”
সমাবেশে অন্যান্য বক্তরা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ শুধু ছাত্রদের দাবী নিয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদীদের অন্যায় যুদ্ধ ওনিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগ্রামের মাধ্যমে আন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে নিজেকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। পিসিপি‘র শ্লোগান শুধু পাহাড়ি ছাত্র ছাত্রীদেরে জন্য নয় সমগ্র ছাত্র সমাজের ক্ষেত্রে তা আজ প্রযোজ্য।
বক্তব্য অরো বলেন, শুধু পর্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল হচ্ছে তা নয় সারা দেশে বিশেষত ঢাকার পার্শবর্তী অঞ্চল নারায়গঞ্জের রূপগঞ্জ এবং আড়িয়াল বিলে উন্নয়নের নামে সাধরণ জনগণকে উত্খাত করার ষড়যন্ত্র তারই প্রমাণ। তাই সারা দেশে ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে। নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সরকার ছাড়া সংবিধানে জাতিসত্তার স্বীকৃতি ও জাতিসত্তার আত্মনয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় ।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ শুধু এক জাতির দেশে নয়। এ দেশ বহুজাতি ও বহুভাষাভাষীর দেশ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে জাতিসত্তা সমূহকে অস্বীকার করা হয়। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন জাড়ি রেখে জাতিসত্তার গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে চাচ্ছে। সারা দেশে যেকোন সভা সমাবেশের উপর পুলিশি হামলা ও বাধা প্রদানের মাধ্যমে সরকার জনগণের ন্যুনতম গণতান্ত্রিক অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিচ্ছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার চরম ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করে চলেছে। বক্তারা সরকারের চরম ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সভা সমাবেশের উপর বিধি নিষেধ তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা, অপারেশন উত্তরণ বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, ১৭ এপ্রিল রামগড় শনখোলা পাড়া ঘটনার নিরপেক্ষ গণতদন্ত কমিটি গঠন, উন্নয়নের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদের লক্ষে জায়গা জমি দখল প্রক্রিয়া ও সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা, অস্থিতিশীল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধানোর লক্ষে সেটলার বাঙালিদের মানবঢাল হিসাবে ব্যবহার বন্ধ করা, ক্রসফায়ারের নামে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করা ও খুনি বাহিনী র্যাবকে ভেঙ্গে দেয়া, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনী তথা সিএইচটিএনএফ নামক সন্ত্রাসী বাহিনীকে মদদদান বন্ধ করা, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও মিডিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অপপ্রচার বন্ধ করা, বান্দরবানে রুমা সেনা গ্যারিসন, বিজিবি হেড কোয়াটার, বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের নামে ৯,৫৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ করা ও সেমুতাং গ্যাস উত্তোলনের আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের গ্যাস প্রপ্তির অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে অপরাজেয় বাংলা থেকে একটি র্যালী বের করা হয়।র্যালীটি টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসকাব, পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার দোয়েল চত্বর হয়ে শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়৷