বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ এবং চাকমা রাণীর উপর হামলার বিচার চেয়ে বান্দরবানে প্রচারপত্র ও পোস্টারিং

0
39

বান্দরবান প্রতিনিধি॥ রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ২২ জানুয়ারী দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন এবং চাকমা রাণী য়েন য়েন-কে লাঞ্ছনার বিচার চেয়ে বান্দরবান শহরে প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টারিং করা হয়েছে। বান্দরবান সচেতন ছাত্র-যুব সমাজের পক্ষ থেকে  এ প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টারিং করা হয়।

প্রচারপত্রে বলা হয়, ‘গত ২২ জানুয়ারী ২০১৮ খৃষ্টাব্দ রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ির দুর্গম অরাছড়ি গ্রামে টহল দেয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুই সহোদর মারমা বোনকে তাদের বাড়িতে বাবা-মার সামনে ধর্ষণ করে ও যৌন নির্যাতন চালায়। পরদিন তাদেরকে রাঙামাটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেনাবাহিনী প্রথম থেকে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ঘটনার পরদিন এলাকার মুরুব্বীরা ফারুয়া আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ জানালে কমান্ডার দোষী সেনা সদস্যদের শাস্তি না দিয়ে উল্টো ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য তাদেরকে হুমকি ও চাপ দেন। রাঙামাটির হাসপাতালেও উক্ত দুই বোনের সাথে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। এভাবে দুই বোনকে কার্যত হাসপাতালে পুলিশী প্রহরায় বন্দী রাখা হয় এবং এক পর্যায়ে ১৫ ফেব্রুয়ারী চাকমা রাণী য়েন য়েন ও নির্যাতিত দুই বোনের সাহায্যকারী এক স্বেচ্ছাসেবককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে সেনা-পুলিশ দুই বোনকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।’

উক্ত সহোদর দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন এবং চাকমা রাণী ও স্বেচ্ছাসেবিকার উপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রচারপত্রে আরো বলা হয়, ‘বর্তমানে যৌন হামলার শিকার দুই বোনকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাসপাতাল থেকে অপহরণের পর রাঙামাটিতে এক জেলা পরিষদ সদস্যের বাড়িতে পুলিশের পাহারায় রাখা হয়েছে। তাদের সাথে কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে তাদেরকে সেখানে বন্দীর মতো জীবন যাপন করতে হচ্ছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীদের উপর ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন নতুন কোন বিষয় নয় উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘গত চার দশকে শত শত পাহাড়ি নারী সেনাবাহিনী ও সেটলারদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অনেককে ধর্ষণের পর অত্যন্ত নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। এই সব ধর্ষণের কোন ঘটনার বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। শাস্তি হয়নি কল্পনা চাকমার অপরহণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসরদেরও। তাকে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিউ লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।’

যতদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও সেটলাররা থাকবে ততদিন জুম্ম নারীদের জীবন নিরাপদ হবে না মন্তব্য করে উক্ত লিফলেটে বলা হয়, ‘আমরা এসব অন্যায় অত্যাচার কখনো মেনে নিতে পারি না। আমাদের মা-বোনকে বেঈজ্জত করা হবে, আর আমরা চুপ করে বসে থাকবো তা কখানো হতে পারে না। আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। অন্যায়কারীরা যতই হম্বিতম্বি করুক তাদের পরাজয় হবেই হবে। কারণ সত্য ও ন্যায়ের জয় কেউ ঠেকাতে পারে না।’

প্রচারপত্রে বান্দরবানসহ দেশের ছাত্র, তরুণ, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী তথা আপামর জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘ভীরু কাপুরুষের মতো মুখ বুঁজে অন্যায় অত্যাচার সহ্য করবেন না, একতাবদ্ধ হয়ে মাথা তুলে দাঁড়ান। সরকার ও সেনাবাহিনীর দালাল, সুবিধাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রত্যাখ্যান করুন। স্বজাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হোন, নিজের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করুন।’

এছাড়া এতে সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো রাঙামাটির বিলাইছড়িতে দুই সহোদর মারমা নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতার করে আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। উক্ত দুই বোনকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রদানে গড়িমসি বন্ধ করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সাথে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার উক্ত দুই বোনকে বন্দী দশা থেকে মুক্তি দিয়ে চাকমা রাজা ও রাণীর নিরাপদ হেফাজতে তুলে দিতে হবে। চাকমা রাণী ও স্বেচ্ছাসেবকদের উপর হামলার সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং সেটলারদেরকে সমতলে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।’

পোস্টারিং
এছাড়া সচেতন নারী সমাজ ও প্রতিবাদী নারী সমাজের নামে বান্দরবান শহরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করা হয়েছে। এতে বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনের ওপর যৌন হামলা ও চাকমা রাণীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করা হয়েছে।

 


———————

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.