সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটি: জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপ মিজোরামের লংলেই জেলার চংতে ব্লকের পার্বা নামক গ্রামে একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এই গ্রামটি ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের ত্রিমুহনীতে অবস্থিত।
সন্তু গ্রুপের একটি সূত্র সিএচটি নিউজ ডটকমকে জানায়, সন্তু লারমা সম্প্রতি রাঙামাটিতে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তার প্রধান অস্ত্র সংগ্রাহক জিত চাকমাকে অতি দ্রুত উক্ত বেস ক্যাম্পটি খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। জিত চাকমা মিজোরামের আইজলে অবস্থান করে থাকেন, তবে কিছু দিন আগে তিনি রাঙামাটি আসেন। গত ২৬ জুন রাঙামাটি শহরের মন্ত্রী ক্লাবে তার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।
সন্তু লারমা ক্যাম্প খোলার প্রক্রিয়ায় জিত চাকমাকে সকল ধরনের সহযোগিতা দেয়ার জন্য ফিল্ড কমান্ডার লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা ওরফে দেবাশীষ ওরফে রাজাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সন্তু গ্রুপের ওই সূত্রটি জানিয়েছে।
এ সব ঘটনাবলী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল জেএসএস-এর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, পার্বায় ক্যাম্প স্থাপন করা হলে তা হবে সন্তু গ্রুপের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি এবং এর উদ্দেশ্য দুইটি। প্রথমত, সন্তু লারমা ভারতীয়দেরকে বিশ্বাস করেন না, তিনি ১৯৮৩ – ৮৫ সালে জেএসএস-এর গৃহযুদ্ধ ও তার বড় ভাই এম. এন. লারমার মৃত্যুর জন্য তাদেরকে দায়ি করেন। জেএসএস-এর সকল নেতা-কর্মীকে বলে দেয়া হয়েছে ‘ব্যবহার করে ফেলে দাও’ (use and throw) এই নীতি দ্বারা পরিচালিত ভারতীয়দের সাথে ঘনিষ্টতা না বাড়াতে। দ্বিতীয়ত, সন্তু গ্রুপ মায়ানমার বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সাথে ইতিমধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। সন্তু বাবু গোপনে বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দলকে তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য পাঠিয়েছেন। তার ঘন ঘন বান্দরবান সফরের উদ্দেশ্যও হলো মূলতঃ মায়ানমারের বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।
ওই জেএসএস নেতা বলেন, সন্তু বাবু একটি মাত্র ঝুড়িতে তার সব ডিম আর রাখতে রাজী নন।
তবে জানা যায়, দিল্লীতে অবস্থানরত সন্তু গ্রুপের করুণালংকার ভিক্ষু পার্বায় ঘাঁটি হোক তা চান না। তিনি সেখানে ঘাটি স্থাপনের তীব্র বিরোধীতায় নেমেছেন। তার ধারণা, পার্বায় ক্যাম্প স্থাপন করা হলে তা তার প্রতিদ্বন্দ্বী জিত চাকমার হাতকেই শক্তিশালী করবে। জিত চাকমার সাথে তার রেষারেষি রয়েছে। তাকে মোকাবিলার জন্য করুণালংকার তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় আরো ক্যাম্প বিস্তারের প্রস্তাব করেছেন। গত জুন মাসে ভগবান টিলার কাছাকাছি তাদের একটি টিম পৌঁছে গেছে। এই এলাকায় তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
করুণালংকার ভিক্ষু তার ঘনিষ্টজনদের জানান, তিনি শীঘ্রই জেএসএস সন্তু গ্রুপের আসল মুখোশ খুলে দেবেন। তিনি গত মে মাসে (২০১৫) ত্রিপুরা ও মিজোরামে সন্তু গ্রুপের বেশ কয়েকটি ঘাঁটিতে সফর করেন। এ সময় তিনি বেশ কিছু ছবি তোলেন। তিনি এই ছবিগুলো যথা সময়ে ছেড়ে দেবেন বলে হুমকী দেন।
করুণালংকার ভিক্ষু সন্তু গ্রুপের কাছে ৪১টি গ্রেনেড সরবরাহের সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যে সফর করেন তার ছবি তিনি নিজে ছেড়ে দিয়েছেন কী না সে ব্যাপারেও সন্তু গ্রুপের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
সন্তু গ্রুপের সূত্রটির মতে, ‘এই ছবিগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি তিনি (করুণালংকার) অনেকের আপত্তি সত্বেও সিএইচটি নিউজ ডটকমের স্টোরিটাও তার ফেইসবুক একাউন্টে (kimjummachakma) সেঁটে দিয়েছেন। এর অর্থ হলো সন্তু লারমাকে উদ্দেশ্য করে বলা যে, করুণালংকার ভিক্ষুকে কেউ কিছু করতে পারবে না। তাই বলা যেতে পারে, সন্তু লারমাকে অন্ততঃ একজন কচু দেখিয়েছে, কিন্তু সন্তু বাবু তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছেন না।’
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।