মধুপুরে বনবিভাগ কর্তৃক ‘আদিবাসীদের’ উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

0
132

মধুপুর (টাঙ্গাইল) ।।  টাঙ্গাইলের মধুপুরে তথাকথিত জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণার নামে বনবিভাগ কর্তৃক স্থানীয় ‘আদিবাসীদের’ নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পেশ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর একটি স্মারকলিপি।

আজ সোমবার (২৫ জানুয়ারি ২০২১) সকাল ১১টায় মধুপুর উপজেলার আনারস চত্ত্বরে ‘মধুপুর গড়াঞ্চলের সংক্ষুব্ধ আদিবাসী জনগণ’ ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় তারা ‘খা সাংমা, খা মারাক’, ‘আমার ভূমি আমার মা, কাইড়া নিতে দেব না’, ‘বন বিভাগের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান’, ‘পীরেনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক-এর সভাপতিত্বে ও বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি জন যেত্রার সঞ্চালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু) মধুপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ইব্রিয় মানখিন, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশনের (জিএসএফ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লিংকন দিব্রা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সম্পাদক অলিক মৃ, আচিক মিচিক সোসাইটির সভাপতি সুলেখা ম্রং, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অজয় মৃ।

সমাবেশে ইব্রিয় মানখিন বলেন, ‘২০০৪ সালে মধুপুর ইকোপার্ক বিরোধী আন্দোলনে পীরেন স্নালকে বনবিভাগ ও তাদের দোসরেরা গুলি ছোড়ে হত্যা করে। তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলে আদিবাসীদের ভূমির অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন। শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আরোহনের পরও আদিবাসীরা ভূমির অধিকার পেল না। কবে পাবে?’ এমন তির্যক প্রশ্ন গাসুর এই নেতার।

লিয়াং রিছিল বলেন, ‘করোনার সময়েও শাল-অরণ্যে বসবাস করা আদিবাসীদের পাবলিক প্লেসে এসে প্রতিবাদ মিছিল, গণ-অবস্থান নিতে হয়। এই কর্মসূচি শাল অরণ্য রক্ষার আন্দোলন, শত ত্যাগেও এই আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।’

সংরক্ষিত বনভূমির নামে আদিবাসী উচ্ছেদ আতঙ্কের অবসান না করলে আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে নামার হুশিয়ার বার্তা উচ্চারণ করেন বাগাছাস-এর কেন্দ্রীয়্ কমিটির সভাপতি লিংকন দিব্রা।

অলিক মৃ অভিযোগ করে বলেন, মধুপুরের অরণ্য জুড়ে আদিবাসীরা বসবাস করে। এবং একে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলা হয়। ভোটের সময় আওয়ামী লীগ আদিবাসী মানুষের পাশে ঘেঁষে কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরল আদিবাসীদের ভুলে যায়; প্রতারণা করে। মধুপুরের আদিবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এই ছাত্র নেতা।

সুলেখা ম্রং বলেন, বন বিভাগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পোশাক পরিধান করে বন রক্ষার নামে মধুপুরের আদিবাসীদের উচ্ছেদ করতে আসে। কিন্তু আদিবাসীরা আছে বলেই এখনো মধুপুরে বন দেখতে পাওয়া যায়। বন বন বিভাগের হাতে গেলে এইসব বন আর দেখা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অজয় মৃ বলেন, বন বিভাগ, বন আইন তৈরীর আগে থেকেই মধুপুরে আদিবাসীরা বসবাস করে আসছে। যার প্রমাণ ভুটিয়ার প্রাইমারী স্কুল ও বেরীবাইদের প্রাইমারী স্কুল। ১৯১৫ সালে ভুটিয়ার স্কুল নির্মাণ হয়। অতীতে দেখা গেছে, মধুপুরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বন বিভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাস্তবে তারা বন ধ্বংস করে আদিবাসীদের উপর দোষ চাপিয়েছে।

সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.