সিএইচটি নিউজ ডেস্ক : হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক দয়া সোনা চাকমাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে দেশ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, চিত্র নির্মাতাসহ ৬৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক আজ ২৮ মার্চ ২০১৮, বুধবার সংবাদ মাধ্যমে এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সিএইচটি কমিশিনের কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক মালেকা বেগম, নারী আন্দোলন কর্মী শিরীন হক, ইতিহাসবিদ আহমেদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সি আর আব্রার, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, শিল্পী লুবনা মরিয়ম, ইতিহাসবিদ সোনিয়া নিশাত আমিন, শিল্পী ঢালী আল-মামুন, শিল্পী দিলারা বেগম জলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমেনা মহসীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ৃয়া, আলোকচিত্রী তাসলিমা আক্তার, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস (বস্টন, যুক্তরাষ্ট্র)-এর অধ্যাপক ইলোরা চৌধুরী, লেখক-নাট্যকার-পরিচালক অভিনেত্রী লীসা গাজী, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীনা সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, শিল্পী মুনেম ওয়াসিফ, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি (অস্ট্রেলিয়া) বীণা ডি’কস্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)-এর পিএইচডি গবেষক নাইম মোহায়মেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জোবায়দা নাসরীন, শিল্পী ঋতু সাত্তার, ডকুমেন্টারি নির্মাতা ফারজানা ববি, পিএইচডি গবেষক (জার্মানি) মাহা মির্জা, ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাজ্য)-এর পিএইচডি গবেষক সাদাফ নূর ইসলাম, আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (কানাডা)-এর পিএইচডি গবেষক হানা শামস আহমেদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ান, জেএনইউ (দিল্লী)-এর পিএইচডি গবেষক নাজনীন শিফা, লেখক-শিক্ষক-গবেষক পার্সা সাজিদ, অধিকারকর্মী শিক্ষক ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন, রাইস ইউনিভার্সিটি (টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র)-এর অধ্যাপক ইলোরা শেহাবউদ্দিন, নাগরিক উদ্যোগ-এর জাকির হোসেন, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবারা (যুক্তরাজ্য) -এর দেলওয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নাসরিন খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ তাঞ্জীমউদ্দীন খান, গবেষক (অস্ট্রেলিয়া) কবিতা চাকমা, ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট লন্ডন (যুক্তরাজ্য)-এর রুমানা হাশেম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সালমা আলী, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সাদিয়া আরমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক স্বাধীন সেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আইনুন নাহার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রায়হান রাইন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আনিসা পারভীন জলি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ফাহিমা আল ফারাবি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোজাহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক শহীদ সুমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের মাহমুদ সুমন, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ, গবেষক সায়দিয়া গুলরুখ, লেখক রেহনুমা আহমেদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একদল নব্য মুখোশাহিনী সশস্ত্র সন্ত্রাসী রাঙামাটির কুদুকছড়ি ইউনিয়নের আবাসিক এলাকায় ইউপিডিএফ সমর্থিত গণসংগঠনের নেতাকর্মীরা যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সেখানে অতর্কিতে ব্রাশফায়ার করে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমা প্রাণ রক্ষার্থে একটি নিকটস্থ বাড়িতে আশ্রয় নেন। সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় যে, সেই বাড়িতে সন্ত্রাসীরা ঢুকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে বের করে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়।
ব্রাশফায়ারে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ধর্শসিং চাকমা পায়ে গুলিবিদ্ধ হন ; যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা দুর্গম এলাকা থেকে পড়তে আসা ছাত্র ছাত্রীদের একটি ছাত্র মেসে আগুন লাগিয়ে দেয়।
নাগরিকগণ অপহরণের এতদিন পরও প্রশাসনের কোন কার্যকর উদ্ধার তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার রহস্যজনকভাবে চরম নির্লিপ্ত। রাজনৈতিক কর্মীদের দিনে দুপুরে সন্ত্রাসীদের দ্বারা অপহরণে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই’।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালে পিসিপি নেতা রমেল চাকমা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতনজনিত মৃত্যুর গুরুত্বপুর্ণ সাক্ষী ছিলেন মন্টি চাকমা ; এ বছর জানুয়ারি মাসে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার মারমা বোনদের যখন রাঙামাটি হাসপাতালে অন্তরীণ রাখা হয় তখন দয়াসোনা চাকমা একাধিকবার ট্রমা আক্রান্ত তরুণীদের প্রতি সহানুভুতি জানাতে হাসপাতালে যান। অভিযোগ রয়েছে, মারমা বোনদের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, গত কয়েক মাস ধরে দিনেদুপুরে একের পর এক চলছে মুখোশবাহিনীর সন্ত্রাস। এ বছরের জানুয়ারির শুরুতে নিজ বাসা থেকে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে খুন করে তারা। প্রশাসন এখনো পর্যন্ত খুনি কাউকে ধরতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে পদে পদে সেনাবাহিনীর নজরদারী মধ্যে থাকতে হয় সেখানে এই প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক যে কীভাবে সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় পাহাড়ে এই নব্য-সৃষ্ট মুখোশবাহিনীর সন্ত্রাসীরা ফিল্মি কায়দায় রাজনৈতিক কর্মীদের উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের খুন করে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং উত্তরোত্তর আরো বেপরোয়া হওয়ার সাহস পাচ্ছে?
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘নব্য-সৃষ্ট মুখোশবাহিনীর সন্ত্রাস ভয়ংকরভাবে মানবাধিকার লংঘন করছে ও পাহাড়কে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে ২১ বছর আগে অপহরণ করা হয়েছিল, অপহরণকারীরা আজও ধরা পড়েনি, কোন বিচার হয়নি। পাশাপাশি সতমলসহ সারা দেশেই খুন-গুম-ধর্ষণের অবাধ তৎপরতার প্রতি সরকারের নির্লিপ্ত ভূমিকায় আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমার অপহরণসহ গুম, খুন, ধর্ষণের বিচারহীনতা এবং সরকারের নির্লিপ্ততার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে অপহৃত নেতৃদ্বয়কে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানের দাবি জানাই’।
————————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।