মাইক্রোবাসে গারো তরুণীকে ধর্ষণ: পুলিশের অবহেলা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে রুল
সিএইচটিনিউজ.কম
রাজধানীতে মাইক্রোবাসে তুলে এক গারো তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে বিলম্ব কেন ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করা হবে না, অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।
পাঁচ মানবাধিকার সংগঠনের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ সোমবার এই তিনটি রুল জারি করে।
এছাড়া থানায় ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ ও জন্ম পরিচয় নির্বিশেষে বৈষম্যমহীনভাবে সবার সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে একটি সার্কুলার জারির নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
যৌন হয়রানি ও যৌন সহিংসতা রোধে বিদ্যমান আইন ও প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মীদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে রিটকারীদের কাছে নামের তালিকা চেয়েছে হাই কোর্ট।
আগামী ৩১ মের মধ্যে এই তালিকা আদালতে দিতে বলা হয়েছে রিটকারী চার সংগঠনকে।
নারীপক্ষ, মহিলা পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আইন ও শালিস কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট রোববার এই রিট আবেদন করলে সোমবার তার ওপর শুনানি হয়।
রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন জেড আই খান পান্না, মাসুদা রেহেনা বেগম ও মেহবুবা জুঁই।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নুসরাত জাহান।
যমুনা ফিউচার পার্কের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী ২১ বছর বয়সী এই তরুণী গত বৃহস্পতিবার রাতে কুড়িলে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন একদল যুবক তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর ডাক্তারি পরীক্ষার ধর্ষণের প্রমাণ মেলার পর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।
রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর মামলা করার জন্য মেয়েটিকে নিয়ে থানায় থানায় ঘুরে পুলিশের অসহযোগিতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় অভিভাবকদের।
মেয়েটির বড় বোনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের বাসা উত্তরায় হওয়ায় তারা প্রথমে মামলা করার জন্য তুরাগ থানায় যান। কিন্তু অন্য এলাকার ঘটনা বলে পুলিশ রাত ৪টার দিকে তাদের ফিরিয়ে দেয়।
এরপর ভোর ৫টার দিকে তারা যান গুলশান থানায়। সেখানেও একই উত্তর মেলে। শেষে সাড়ে ৬টার দিকে ভাটারা থানায় গেলে বলা হয়, ওসি নেই, অপেক্ষা করতে হবে।
এরপর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওসি আসেন এবং তাদের কথা শুনে সাড়ে ১২টার দিকে মামলা নথিভুক্ত করা হয়।
মামলা নিতে অবহেলার জন্য কোন পুলিশ সদস্যরা দায়ী এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে জানাতে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
মামলা গ্রহণ, ওই তরুণীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো এবং ডাক্তারি পরীক্ষায় বিলম্ব কেন অসাংবিধানিক ও নারী নির্যাতন দমন আইনের লঙ্ঘন হবে না- তা জানতে একটি রুল দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় রুলে আদালত জানতে চেয়েছে- ধর্ষণের শিকার তরুণীকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না?
আর মামলা নিতে বিলম্বের জন্য দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে কেন শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে আরেকটি রুলে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার; উত্তরা, ক্ষিলক্ষেত, গুলশান ও ভাটারার ওসি এবং ভাটারা থানার তখনকার ডিউটি অফিসারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছে হাই কোর্ট।
এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৪ জুন পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছে।
সৌজন্যে: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম