মাইসছড়িতে নারীদের প্রতিরোধে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ
মহালছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়িতে পাহাড়ি নারীদের প্রতিরোধে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার (২১ জুলাই ২০২৩) বেলা ২টার দিকে মো. আব্দুল লতিফ নামে একজন সেটলার জয়সেন পাড়ায় নির্মিত নতুন সেনা ক্যাম্প থেকে ৩০ জনের মতো একদল সেনা সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে বদানালা গ্রামে যায়।
আব্দুল লতিফের বাড়ি বর্তমানে লেমুছড়ি। তার পিতার নাম কাশেম মণ্ডল। তার উদ্দেশ্য ছিল সেনা সদস্যদের দিয়ে কয়েক মাস আগে পুরোন বাড়ি নুতন করে তোলা বা মেরামত করা পাহাড়িদের কয়েকটি বাড়ি ভেঙে দেয়া।
কিন্তু পাহাড়ি নারীদের শক্ত অবস্থান দেখে তার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। সেনা সদস্যরা বাড়িগুলো ভেঙে না দিয়ে বাড়ির মালিকদের বদানালা দোকানে যেতে বলে। সে সময় তাদের সাথে বদানালা গ্রামের কার্বারী অনন্ত বিকাশ চাকমা ও ৪ নং মাইসছড়ি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার গুণসিন্ধু চাকমাও ছিলেন।
সেনারা বাড়িগুলো কবে নির্মাণ করা হয়েছে জানতে চাইলে নারীরা বলেন তারা সেখানে বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। এরপর সেনা সদস্যরা আর কোন কথা বলেননি।
গ্রামের নারীদের সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে সেটেলার আব্দুল লতিফের ওপর। তারা তাকে পাহাড়িদের জমির দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে না তাকাতে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করলে এতে আপনার মাথা ব্যথা কেন?’ তারা তাকে আর আর্মি পুলিশ নিয়ে সেদিকে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়িতে সেটেলাররা সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রায় সময় পাহাড়িদের জমি জোরপূর্বক দখল করে থাকে। ইতিপূর্বে ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে পাহাড়ি বসতিতে হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের বহু ঘটনা ঘটেছে।

পাহাড়িরা যাতে ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে তার জন্য সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জনমনে সব সময় ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাখে। এমনকি তারা তাদের মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনীদের দিয়ে ভূমি মালিকদের হুমকি দিয়ে থাকে।
এতকিছুর পরও পাহাড়ি নারীরা নিজেদের জমি রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তারা সেনা-সেটেলারদের অন্যায় জুলুম আর সহ্য করতে রাজী নয়।
গতকাল প্রতিরোধকারী একজন নারী এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আর চুপ করে থাকবো না। আমাদের পিঠ বহু আগে দেয়ালে ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার আর কোন রাস্তা নেই। বাঁচতে হলে প্রতিরোধ করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।
তিনি এলাকার হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীদের সমালোচনা করে বলেন, তারা ঠিক থাকলে আমাদের এত কষ্ট হতো না। সেটেলাররাও ইচ্ছেমত ভূমি বেদখল ও আমাদের ওপর হামলা করতে পারতো না।
“মুরুব্বীরা ভীরু কাপুরুষ হয়ে আছে। সত্য কথাও তারা বলতে ভয় পায়। অনেকে গোপনে টাকা খেয়ে সেটেলারদের পক্ষ নেয় বলেও ধারণা হয়।” তিনি এদেরকেও শায়েস্তা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন