মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর দাবিতে নান্যাচর ও কাউখালীতে পিসিপি’র বিক্ষোভ
সিএইচটিনিউজ.কম
সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুসহ শিক্ষা সংক্রান্ত পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটির জেলার নান্যাচর ও কাউখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।
নান্যচর থানা শাখার সভাপতি অনিল চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক সর্বানন্দ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বাবলু চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা, সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কমেন্দু বিকাশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সহ-সভাপতি কুমেন্টু চাকমা প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর থানা শাখার সহ-সভাপতি রিপন আলো চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা কোনো রাষ্ট্র বানাতে নয়। আমাদের আন্দোলন অধিকারের জন্য। সরকার আমাদের সব অধিকার খর্ব করে চলেছে। বাংলাদেশে যেসব ক্ষুদ্র জাতিসত্তা যুগের পর যুগ বসবাস করে আসছে তাদের মৌলিক অধিকারগুলো খর্ব করেছে সরকার।
সমাবেশে সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা বলেন, মহাজোট সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিসত্তাকে নিশ্চিহ্ন করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সংবিধানে এসব জাতিসত্তার জাতিগত পরিচিতি মুছে দিয়ে বাঙালি পরিচয় চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমানে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। পাহাড়ি জনগণ এটা কখনও হতে দেবে না। যে কোনো মূল্যেই সরকারের এসব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক সর্বানন্দ চাকমা বলেন, আমরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন কোনো এলাকা নয়। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের ওপর সব সময় শাসন ও দমনপীড়ন চলে আসছে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বাবলু চাকমা বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র বানাতে চাই না। আমরা আমাদের অধিকার চাই। অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলবে। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে পাহাড়ি জনগণ। আর এজন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।
সমাবেশ শেষে উপজেলা চত্ত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে নানিয়ারচর বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার উপজেলা চত্ত্বর গিয়ে শেষ করা হয়।
এদিকে, একই দাবিতে জেলার কাউখালী উপজেলায়ও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালী থানা শাখার উদ্যোগে রবিবার সকাল ১১টায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কাউখালী থানা শাখার সভাপতি কংচাই মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক রসকিট চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কাউখালী শাখার আহ্বায়ক সৌমেন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক রুপন চাকমা, রাঙামাটি জেলা দপ্তর সম্পাদক রতন চাকমা প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকারকে অবিলম্বে পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত জাতি সত্ত্বাদের মাতৃভাষার স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা বলেন, যুগ যুগ ধরে তাদেরকে অবহেলিত রাখা হয়েছে। তাই মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি জানিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইউপিডিএফের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল দাবিকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত অপারেশন উত্তরণ, ভূমি বেদখল, নিপীড়ন-নির্যাতন ধরপাকড় বন্ধ করা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরেয়ে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান। এছাড়া রাঙামাটিতে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবি জানানো হয়।
————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।