মানিকছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক ছেড়ে দেওয়া ৬ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার-শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

0


মানিকছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি-গুইমারা সীমান্তবর্তী তবলাপাড়ায় গ্রামবাসী কর্তৃক আটক ও সেনাবাহিনী কর্তৃক ছেড়ে দেওয়া ৬ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বরাবরে স্মরকলিপি দিয়েছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও নারী আত্মরক্ষা কমিটি, মানিকছড়ি উপজেলা শাখা।

আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তারা এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে তারা ৫ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো:

ক) গুইমারা-মানিকছড়ি সীমান্তবর্তী তবলা পাড়ায় গ্রামবাসী কর্তৃক আটক ও গুইমারা ব্রিগেড কর্তৃক ছেড়ে দেয়া ৬ সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে ও আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তি দিতে হবে।

খ) উক্ত ৬ সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেয়ার সাথে জড়িত গুইমারা ব্রিগেডের সেনাদের শাস্তি দিতে হবে।

গ) সেনাবাহিনীর হামলায় আহতদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ঘ) গত প্রায় ৮ বছর ধরে ঠ্যাঙাড়ে মুখোশ বাহিনীকে সেনাবাহিনী কর্তৃক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান বন্ধ করতে হবে এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিতে হবে।

ঙ) সন্ত্রাসী খোঁজার নামে রাতে-বিরাতে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি, লুটপাট ও হয়রানি এবং অপারেশনের নামে স্কুলঘরকে সেনাক্যাম্প বানানো ও নিরীহ গ্রামবাসীদের আটক বন্ধ করতে হবে।


আজ (বুধবার) সকাল ১০টায় মানিকছড়ি সদরের ধর্মঘর থেকে তিন সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ এলাকার শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে আমতলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। এ সময় তারা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।

এরপর তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে পিসিপি’র মানিকছড়ি উপজেলা সভাপতি আনু মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের প্রতিনিধি রনি ত্রিপুরা, নারী আত্মরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব পাইনু মারমা মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়ার নিকট স্মারকলিপি পেশ করেন।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া উল্লেখিত দাবি বাস্তবায়নে যথাসময়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপিটি পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।

স্মারকলিপি প্রদান শেষ করে আবারও সেখান থেকে মিছিল নিয়ে মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী ডিগ্ৰি কলেজে সামনে গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বরাবরে পেশ করা স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‍‍‍“গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকালে ৬ জন সন্ত্রাসী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর স্থানীয় নেতা কর্মীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ তবলা পাড়ায় যায়। সেখানে তারা সাধারণ লোকজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ও ইউপিডিএফ নেতাকর্মীদেরকে খোঁজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীরা সাহস করে তাদের ৫ জনকে ধরে ফেললে বাকি একজন সন্ত্রাসী জনগণকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। পরে গুইমারা ব্রিগেড থেকে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য এসে তাদেরকে জনতার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গুইমারা-মানিকছড়ির দিকে রওনা দেয়।

“এ খবর জানতে পেরে জনগণ কালাপানি নামক স্থানে তাদেরকে আটকায় এবং সন্ত্রাসীদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রজু করার দাবি জানায়। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা জনগণের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে উল্টো তাদের ওপর গুলি চালায় ও লাঠিপেটা করে। এতে কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়।”

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, “পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা প্রায় প্রতিদিন সন্ত্রাসী খোঁজার নামে পাহাড়িদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঘরবাড়ি তল্লাশি করে, সন্ত্রাসী কোথায় থাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিকভাবে নির্যাতন চালায় এবং সন্ত্রাসীদের আটক করতে তাদের সাহায্য কামনা করে। তাই আমাদের প্রশ্ন, অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ উক্ত ৬ সন্ত্রাসীকে আটক করার পরও কেন সেনাবাহিনী তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে? আর অন্যদিকে কেন সন্ত্রাসীদের আটক করা ও তাদের শাস্তি দাবি করার কারণে গ্রামবাসীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও লাঠিপেটা করে আহত করা হলো? অর্থাৎ যারা দোষী, সন্ত্রাসী তাদের পুরস্কৃত বা ছেড়ে দেয়া হলো, আর যারা সন্ত্রাসীদের আটক করেছে তাদের শাস্তি দেয়া হলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা ব্রিগেডের সেনাদের এ কোন ধরনের ন্যায়বিচার?”


এতে বলা হয়, “উক্ত ৬ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের দাবিতে ইতিমধ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর সড়ক অবরোধ ও ১৫ সেপ্টেম্বর গণ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের কয়েকজনের ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় সয়লাবও হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও প্রশাসন এখনও তাদের কাউকে গ্রেফতার করেনি। গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ কিংবা কার্যক্রমও আমাদের চোখে পড়ছে না।

“উক্ত ৬ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার না করার কারণে ইদানিং এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সাপ্তাহিক হাটের দিন মানিকছড়ির সবজি বাজারে ও তিনট্যহরী বাজারে সন্ত্রাসীরা কাঁচা তরিতরকারি ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগের নেতা মো. মাসুদ হোসেন বাপ্পী ও বাবু মারমার নেতৃত্বে ৭/৮ জনের একটি সন্ত্রাসী দল প্রকাশ্যে অস্ত্র বের করে তাদেরকে হুমকি দিয়ে চাঁদা দিতে বলে, অন্যথায় কাঁচামাল কিনতে নিষেধ করে। আমাদের আশঙ্কা হলো, ‍উক্ত ছয় সন্ত্রাসী প্রতিহিংসা-পরায়ণ হয়ে আবারও তবলাপাড়ায় বা তার আশেপাশের গ্রামে গিয়ে প্রতিবাদকারী গ্রামবাসীদের ওপর হামলা বা অন্য কোনভাবে ক্ষতি করতে পারে।”



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More