মানিকছড়ি-ফটিকছড়ি সীমান্তে অস্ত্রসহ ‘মগপার্টি’ নামধারী ৫ সন্ত্রাসী আটক

0

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নস্থ বটতলী গ্রামে মো. রমজান আলীর বসতবাড়িতে আটক ৫ সন্ত্রাসী। ছবি: সংগৃহিত

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বটতলী এলাকায় অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ‘মগপার্টি’ নামধারী ৫ সন্ত্রাসীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।

আজ শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) সকাল ১১টার সময় বটতলী এলাকার বাসিন্দা মো. রমজান আলীর বসতবাড়ি থেকে গুইমারা রিজিনিয়নের সিন্দুকছড়ি জোনের সেনাবাহিনী তাদের আটক করা হয় বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও সেনাবাহিনী আটককৃতদের নাম ও ঠিকানা জানাতে না পারলেও স্থানীয় সূত্রে তিন জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন- ১. প্রদীপ মারমা (২৬), পিতা-মৃত আপ্রুসি মারমা, গ্রাম- দাজ্যা পাড়া, মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি; ২. উষাজাই মারমা (১৯), পিতা-ক্যচিং মারমা, গ্রাম-ঐ; ৩. চহ্লা মারমা (২৪), পিতা- কংক্য মারমা, গ্রাম: ঐ। বাকী ২ জনের নাম জানা যায়নি।

দুপুরে আটক সন্ত্রাসীদের মানিকছড়ি সেনা ক্যাম্পে আনা হয় এবং উদ্ধারকৃত জিনিসের বিবরণ দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহিত

দুপুর সাড়ে ১২টায় আটককৃত ৫ সন্ত্রাসীকে মানিকছড়ি সেনা ক্যাম্পে আনা হয়। সেখানে সন্ত্রাসী ও উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের ছবি ও বিবরণ উপস্থাপন করা হলেও সন্ত্রাসীদের নাম, ঠিকানা নিশ্চিত করতে পারেনি সেনাবাহিনী। বিকেলে ফটিকছড়ি পুলিশ সন্ত্রাসীদের নাম, ঠিকানা নিশ্চিত হয়ে গণমাধ্যমে জানাবেন বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ পারভেজ মোস্তফা পিএসসি,জি।

সেনাবাহিনীর দেয়া বিবরণ অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে- “১টি একে-৪৭, ৪টি মর্টার, ১টি এম ওয়ান, ১টি এলজি লং ব্যারেল, ১টি রাইফেল, ১টি চায়না পিস্তল, ১টি এলজি শর্ট ব্যারেল, ২টি ওয়াকিটকি, মাইন তৈরির সরঞ্জাম, ভারতীয় রুপি, ৬৭ রাউন্ড গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।”

আটককৃত ৫ সন্ত্রাসী। তবে তাদের নাম ঠিকানা জানাতে পারেনি সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ছবি: সংগৃহিত

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মানিকছড়ি-ফটিকছড়ি সীমান্তের দুইল্যাছড়ি ও বটতলী এলাকায় ‘মগমার্টি’ নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সশস্ত্র অবস্থানের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোররাত ৩টা থেকে সিন্দুকছড়ি জোনের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। সকাল ১১টার সময় বটতলী এলাকার বাসিন্দা মো. রমজান আলীর বসতবাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পাঁচ সন্ত্রসাীকে আটক করা হয়। পরে তাদের ফটিকছড়ি থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয় বলে জানা গেছে।

ফটিকছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক পাঁচজনকে ফটিকছড়ি থানা-পুলিশের নিটক হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য যে, গত ১৯ জানুয়ারি বিকাল থেকে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার কয়েকটি স্থানে মগপার্টি নাম দিয়ে সশস্ত্র তৎপরতার খবর দেয় এলাকাবাসী। এ নিয়ে সিএইচটি নিউজে ‘মানিকছড়িতে “মগপার্টি” নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠির তৎপরতা শুরুর অভিযোগ’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে পরে সন্ত্রাসী দলটি সেখান থেকে অন্যত্র সরে যায়।

জানা গেছে, প্রায় মাসখানেক ধরে উক্ত সন্ত্রাসী গ্রুপটি ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নে অবস্থিত বনবিভাগের ধুরুং বিট-এর বাগানের গাছ সাবাড় করার কাজে লৌহা কামাল নামে এক সেটলার বাঙালির ভাড়াটে হিসেবে গাছ কাটার শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেয়ার কাজ করে আসছিল। মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যছোলা ইউনিয়নের সাপমারা এলাকার বাসিন্দা লৌহা কামাল এই সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে ভাড়া করে বটতলী এলাকায় নিয়ে যায় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। লৌহা কামাল গংদের মধ্যে বাবুল নামে ফটিকছড়ির এক গাছ ব্যবসায়ীর নামও উঠে এসেছে। এ বিষয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিএইচটি নিউজে ’বনবিভাগের ধরুং বিটের বাগান সাবাড় করছে সেটলার-মুখোশরা, বনবিভাগ অসহায়’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কথিত ‘মগপার্টি’ নামধারী উক্ত সন্ত্রাসীদের সাথে নব্যমুখোশ বাহিনীরও যোগসাজশ রয়েছে। এই সন্ত্রাসী গ্রুপটির নেতৃত্বদানকারী হিসেবে কংচাইঞো মারমা নামে একজনের নাম পাওয়া গেছে, যিনি নব্যমুখোশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি গুইমারার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের গরিয়াছড়ি গ্রামে।

গত বছর ৫ এপ্রিল মানিকছড়ির যোগ্যছোলা ইউনিয়নের খাড়িছড়া এলাকা থেকে মো. আব্দুল কাদের প্রকাশ মগ্যা কাদের(৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনায় কংচাইঞো মারমা জড়িত বলে জানা যায়। অপহৃত ব্যক্তির কোন খোঁজ মিলেনি।

এর আগে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর মানিকছড়ি উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের একসত্যাপাড়া থেকে ইমান হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনায়ও ‘মগপার্টি’ পরিচয়দানকারী সন্ত্রাসী গ্রুপের হোতা কংচাইঞো মারমার গং জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সে সময় অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে তারা মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

পরবর্তীতে উক্ত অপহরণ ঘটনাগুলোর সত্যতা প্রকাশ পেলে কংচাইঞো মারমা দলবল নিয়ে বান্দরবানে পালিয়ে যায়। সেখানেই মগপার্টির একটি অংশের সাথে তার যোগাযোগ হয় বলে একটি সূত্রে জানা যায়। পরে মগপার্টির ওই অংশের কাছ থেকে কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবরুদ ক্রয় করে এ বছর জানুয়ারি মাসে মানিকছড়িতে ঢুকে নব্যমুখোশ বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার যোগসাজশে সশস্ত্র তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More