মিটন চাকমাদের আসলে মৃত্যু হয় না, হত্যা করা যায় না এনারা চিরঞ্জীব, অজর, অমর, অক্ষয়

0

মাইদুল ইসলাম

মিটন চাকমা পালি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউপিডিএফ এর সংগঠক হিসেবে কাজ করতেন। তেজোদ্বীপ্ত এক তরুণ যিনি সমতলের ঔপনিবেশিক শোষকদের কাছ থেকে আদিবাসীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অধিকার আন্দোলনে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যেতেন। মিটন জানতেন আদিবাসী কিংবা বাংলাদেশের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের শোষণ, নির্যাতন, বঞ্চনার একটি বড় কারণ লুকিয়ে আছে দেশের বিরাজমান চিরাচরিত ঔপনিবেশিক/ফ্যাসিবাদী/সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক কাঠামোয়। তাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধেও মিটনের স্বর ছিল সুতীব্র।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক বছর নতুন শিক্ষার্থী বরণ অনুষ্ঠানে মাইদুল ইসলামের সঙ্গে মিটন চাকমা। #ছবিটি মাইদুল ইসলামের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহিত।

বিভিন্ন সময়ে ইউপিডিএফ এবং জেএসএস সংগঠন থেকে আমাকে অতিথি করে ডেকে নেওয়া হত, আমি বাছ বিচার করতাম না, পাহড়িদের সব সংগঠনের প্রোগ্রামে থাকতাম। আমি আশ্চর্য হতাম এক পাহাড়িদের মধ্যেই এত এত সংগঠন কেন, এত এত বিভক্তি কাজের হতে পারে না। বরং এটি ছিল একটি প্রশ্নাতীত ঔপনিবেশিক রাজনৈতিক ফাঁদ, এবং এই ফাঁদে পাহাড়িরা পা দিয়ে একজন আরেকজনের থেকে দূর থেকে আরো দূরে সরে গেছে, ক্রমাগতভাবে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যেই একে অপরকে শত্রু জ্ঞান করছে আর একে অপরকে বধ করছে।!! তাঁদের মধ্যেই এই বিভেদ তৈরির কারণ ঔপনিবেশিক চিন্তা ইউনিয়নাইজেশনকে তীব্র ভয় পায়। কারণ ইউনিয়ন ঔপনিবেশিক/ বর্ণবাদী ক্ষমতা-সৌধকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে, বিকল করে দিতে পারে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রকে। বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমি এই কথাগুলোই বারবার ঘুরে ফিরে বলতাম, সবাইকে একত্রিত হতে বলতাম।

আজ জানলাম মিটন চাকমাকে হত্যা করেছে জেএসএস। আদিবাসীদের মুক্তির আন্দোলন করতে গিয়ে এনারা কিভাবে/কখন কলোনিয়াল খাটাশ চরিত্র বর্ণ ধারণ করেছে, তা ভেবে শিউরে উঠি। আর এনারা আনবে আদিবাসীদের মুক্তি, বাংলাদেশের আপামর শোষিত মানুষদের মুক্তি?!

সবার বোধোদয় কবে হবে জানি না, তবে মিটন চাকমা সহ আপনারা যাদেরকেই হত্যা করেছেন, মনে রাখবেন আপনারা খুনি হাসিনার সহযোগী, আপনারা ঔপনিবেশিক/সাম্রাজ্যবাদী/ ফ্যাসিবাদী/বর্ণবাদীদের সহযোগী। আপনাদের হাতে মুখে রক্তের দাগ।

বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা দেখে রাজনীতি শিখতে হবে, জানতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন তরান্বিত করতে আমরা কেউ জাতি, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, লিঙ্গ, আস্তিক, নাস্তিক, বাম, ডান দেখি নাই, সবার আগে আমাদের ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল এবং আমরা তাই করেছি। এবং এই ক্ষেত্রে দেরিতে হলেও আমাদের এই ইউনিয়নাইজেশন কাজ করেছে।

যাইহোক, এভাবে মিটন চাকমাদের আসলে মৃত্যু হয় না, হত্যা করা যায় না এনারা চিরঞ্জীব, অজর, অমর, অক্ষয়। তাই তাঁরা বারেবারে আসে এবং আরও তীব্রভাবে আমাদের মাঝে ফিরে ফিরে আসে চিন্তাবীজ হয়ে।

* লেখক মাইদুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

**লেখাটি লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহিত।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More