মিঠুন চাকমার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে চবিতে প্রদীপ প্রজ্বলন

0

পাহাড়কে বাদ দিয়ে সারাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় : অমল ত্রিপুরা

চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেছেন, বর্তমান দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে সমস্ত অপকর্মের বিচার করবে বলে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে বিগত ১৭ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাঁর দোসর সরকারি আমলা, সেনা-প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা, খুন, গুম অপহরণের বিচারের কথা তারা বলছে না। এর মানে স্পষ্ট এই সরকারও পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চায়। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে সারাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন।

আজ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি ২০২৫) ইউপিডিএফ সংগঠক ও সাবেক পিসিপির সভাপতি শহীদ মিঠুন চাকমা’র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে চবি শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখার আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

মানুষের ত্যাগ ও লড়াই-সংগ্রাম আমাদের অনুপ্রাণিত করে মন্তব্য করে অমল ত্রিপুরা বলেন, “শহীদ মিঠুন চাকমার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে যে প্রদীপ আমরা জ্বালিয়েছি সেটা পাহাড়ের অধিকারের জন্য এক একটি করে বিপ্লবের আলো ছড়াবে। প্রত্যেকটি বিপ্লবের সময়ে মানুষের সংগ্রাম-লড়াই ও ত্যাগ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কাঠামো থেকে বের হওয়ার জন্য এদেশের মানুষ আত্মোৎসর্গ করেছে। শহীদ মিঠুন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ের একজন অগ্রণী সৈনিক ছিলেন এবং পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অধিকার কায়েম হলে পাহাড়ি জনগণ অধিকার ফিরে পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।

মিঠুন চাকমা খুনীরা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় পাহাড়ে ঘুরাফেরা করছে উল্লেখ করে ছাত্রনেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, সাত বছর হলো কিন্তু মিঠুন চাকমার খুনীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যাঁরা সেনা কর্মকর্তা-প্রশাসনে দায়িত্বে ছিল তাঁদের সাথে খুনীদের এখনো দহরম মহরম সম্পর্ক। খুনীরা তিন পার্বত্য জেলা ও উপজেলা সদরগুলোতে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। এখনো দিন দুপুরে সেনা প্রশাসনের মদদে পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম ও খুন করছে। গত ৩০ অক্টোবর’২৪ এ পানছড়িতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৩ জন ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যা করেছে। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিয়োজিত সেনা-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী সৃষ্ট নব্য মুখোশসহ সকল ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী ভেঙে দিতে হবে এবং মিঠুন চাকমা’র খুনীসহ বিগত ১৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল বিচার বহির্ভুত হত্যা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের বিচার করতে হবে ।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মিঠুন চাকমাদের মতো আমরাও প্রস্তুত রয়েছি। বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।

এর আগে মিঠুন চাকমা’কে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, সদস্য নিউটন চাকমা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিঠুন চাকমাসহ সকল বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।


প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে মিঠুন চাকমার জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চবি শিক্ষার্থী শিউলী ত্রিপুরা।

সভা সঞ্চালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা। এসময় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, মিঠুন চাকমা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে ইউপিডিএফে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি আদালত থেকে মামলার হাজিরা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির প্রবেশ গেট থেকে সেনাসৃষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে মিঠুন চাকমাকে তুলে নিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More