যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যোগাযোগ মন্ত্রীর নজরে আসে টিউমার আক্রান্ত পাহাড়ি শিশুটি
নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দরবান: শিশুটির বয়স মাত্র ১১ মাস। জন্মের এক বছরের মাথায় তার দুই চোখের মাঝামাঝি অর্থাৎ নাকের উপর একটি টিউমার হয়। টিউমারটি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে অনেক বড় আকার ধারণ করে। দিশেহারা হয়ে পড়ে শিশুটির পরিবার।
বান্দরবান সদর উপজেলার চিম্বুক পাহাড়ের টংকবতী ইউনিয়নে ১৬ মাইল বাগান পাড়ার সিংরাও ম্রো আর পাইংপাউ ম্রো একমাত্র সন্তান চিংরুং ম্রো। শিশুটির বাবা-মা কৃষি কাজ করে সংসার চালায়, সন্তানের অপারেশন করানোর মত তাদের নেই কোনো বিশাল সম্পত্তি।
শিশুটির বাবা-মার কাছে থাকা কিছু সম্বল-সম্পত্তি বিক্রি করে বান্দরবান ইম্মানুয়েল ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডা. জ্যোতিময়ের কাছে নিয়ে যান এবং কিছুদিন চিকিৎসা করেন। কিন্তু সেখানে কোনো পরির্বতন না দেখে বাড়িতে নিয়ে আসে।
মানবেতর এই ঘটনা নিয়ে থানচি সদর ইউপি চেয়ারম্যানের পেজে যখন শিশুটির ছবি দেখে তখন উথোয়াই মারমা জয় বিস্তারিত তথ্য নিয়ে পরিবারটির অসহায়ত্বের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও কিছু অনলাইন প্যোটালে নিউজ লেখেন। সম্প্রতি লেখাটি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নজরে পড়ে।
ফেসবুকের সেই পোস্টের সূত্র ধরে ম্রোং সম্প্রদায়ের ওই পরিবারের খোঁজ নিতে থাকেন মন্ত্রী। বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা মোটেই সহজ ছিল না। মন্ত্রী প্রথমে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চেষ্টা করলেন, কিন্তু ব্যর্থ। পরে থানচির এক ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খোঁজ মিলে পরিবারটির।
তারপর চিং রুং ম্রোকে সপরিবারে ঢাকা আনার ব্যবস্থা করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
শনিবার (২৮ মে) ঢামেকে সেই শিশুটিকে দেখতে আসেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কথা বলেন তার পরিবার ও দয়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে।
শিশুটির চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড মন্ত্রীকে জানায়, দেশেই চিং রুংয়ের সুচিকিৎসা সম্ভব। পরে মন্ত্রী শিশুটির চিকিৎসার ব্যয় নিজে বহন করবেন জানিয়ে বোর্ডকে সুচিকিৎসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে শিশুটির চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন নিউরোসার্জন ডা. রাজিউল হক, নাক কান গলা বিভাগের ডা. আবু ইউসুফ ফকির, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. আবুল কালাম আজাদ।
ফেসবুকে হিউম্যান ওয়েলফেয়ার নামের একটি পেজে এই ঘটনায় সংশ্লিস্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখা হয়েছে চিংরুং কে যারা এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে তার কিছু ইতিহাস না বললে নয়!
আদিবাসী বার্তার লামা প্রতিনিধি উথোয়াই মারমা জয় এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ শিশুটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। তার কথাটা হুবহু তুলে ধরা হল –
“টিউমার আক্রান্ত চিংরুং ম্রো ছবি প্রথম ফেইসবুকে দেখেছিলাম থানচি ইউপি চেয়ারম্যান Mangsharmro Mro পেজে। এরপর শিশুটির খুঁজ নিলে ছেলেটি বিস্তারিত তথ্য দেয় চেয়ারম্যান মহোদয়। দেড়ি না করে চট করে খুলে ফেলি তহবিল সংগ্রহের একটি ইভেন্ট আর নিজের সকল অনলাইন পত্রিকায় দিতে থাকি নিউজ টি।
ইভেন্টে সকল FB বন্ধুদের ইনবাইট করি আর সকলকে ইভেন্ট টা শেয়ার করতে বলি । ইভেন্টটি শেয়ার করার পর অনেকে পোস্টটি শেয়ার করে আর নিজের স্বাধ্যমত সহযোগিতা পাঠায়।এক পর্যায় পোস্টটি দেখে মানুষের জন্য ফান্ডেশন- এর Tandra Chakma দিদি পোস্টটি নিজ FB পেজে শেয়ার করে বন্ধুদের উদ্দেশ্যেই ট্যাক পাঠায়। দিদির FB পেজে দেখে Ehsan Rahman Zia দাদা নিজ পরিচিত বন্ধুদের তা ট্যাক পাঠায়। এরপর ইভেন্টটি দায়িত্ব গিয়ে পরে Mohammad Shamsuddoha Tapos দাদা’র হাতে।
FB তে তাপস দাদা’র সাথে চার্ট করি পরে ওনার ফোন নাম্বার পেয়ে যাই। ফোনে দাদার সাথে চিংরুং চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলি। তিনি তখন আমাকে ঢাকা তে আসতে বলে। আমি ছুঁটে আসি ঢাকাতে। সেখানে গিয়ে তাপস দাদার অফিসে মিটিং করি চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে। এরপরে দাদা আমায় বলে ঢাকার একজন লাগবে যাকে প্রতিনিয়ত ঢাকা তে পাবো, ঠিক তখনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বন্ধু Aungching Marma কে বলি কমিটি তে থাকতে। আসলে বলতে কি আমাদের সব ইভেন্টে ইংরেজি অনুবাদ করে অংচিং। দায়িত্ব পাওয়ার পর সেও এগুতে থাকে চিংরুং চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়।
এর কিছু দিন পর জুম্ম ঘর পেজে Fabian B. Gomes দাদার একটি পোস্ট চোখে পরে যায়। দেখে খুশি হয়ে উঠে মন কিন্তু একটু সন্দেহ আসেও। পোস্টে লেখা ছিলো চিংরুং সকল চিকিৎসার খরচ বহন করবে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তখনি দেড়ি না করে ফাবিয়ান দাদা কে ফোন দেই। তিনি বলেন ঘটনাটা আসলে সত্যিই কিন্তু এর পরেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ একটি শিশুর জীবন বলে কথা।
দেখতে থাকিই সে সু-সংবাদের দিকে। সকালে আমার ফোনে রিং বাজে উঠে দেখি চেয়ারম্যান মাংসা ম্রো মামার রিং। জটপট কল তা রিসিভ করি আর শুনতে পায় চিংরুং কে না কি সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজ গাড়ি পাঠিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর মন্ত্রী মহোদয়ের পেজে দেখা মিলে হাসপাতালে চিংরুকে দেখতে যাওয়া কিছু ছবি। তখনি বন্ধু অংচিং কে আমি রিং করি সেও বলে হুম মন্ত্রী মহোদয় এসেছে এবং চিংরুং সকল চিকিৎসার খরচের দায়িত্ব নিয়েছে। বন্ধু আমাকে বলে ‘তুই তো নিজ চোখে দেখতে পারলি না তাতে কোন সমস্যা নেই, টিভির অধিকাংশ চ্যানেলে দেখতে পাবি’।
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।