রমেলের লাশের ভয়ে সেনাবাহিনীর ঘুম হারাম
।। সুমিত্র ।।
কথায় আছে যারা বেশি ভয় পায়, তারা নাকি সবচেয়ে বেশি ভয় দেখায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অবস্থাও তাই বলে মনে হচ্ছে। তারা জীবিত রমেলকে ধরে নির্যাতন চালিয়ে মৃত বানিয়েছে, কিন্তু তাদের অন্তর থেকে ভয় দূর হয়নি। তারা রমেলের লাশের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। তাদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। যার কারণে তারা রমেলের লাশটি পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলেছে।

ভয় পাওয়ার কারণও নিশ্চয় আছে।
কারণ- রমেল চাকমার লাশটি যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল, তখন পথে পথে অপেক্ষারত শত শত মানুষ বিভিন্ন স্থানে লাশের গাড়িতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারা সেনাবাহিনীর নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতনের প্রতিবাদমুখর হয়। এই দৃশ্য সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ করে আর ভয়ে কাপতে থাকে। তারা ভাবতে থাকে জীবিত রমেল থেকে মৃত রমেলই যেন শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসছে। তাই তাকে আটকাতে হবে। যে ভাবা সেই কাজ। রমেলের লাশটি যখন গাড়ি থেকে নামিয়ে বুড়িঘাট বাজার থেকে বোটে তোলা হলো আর তখনই সেনাবাহিনী সুযোগ বুঝে লাশটিকে ছিনতাই করে নিলো। তারা রমেলের লাশটিকে এতই ভয় পেয়েছে যে, লাশটি কোথায় রেখে শান্তি পাবে তাও বুঝতে পারছিল না। লাশটি নিয়ে কতক্ষণ এই বাড়ি, কতক্ষণ ওই বাড়ি করে তারা কোন রকমে রাত পার করলো। হয়তো লাশটি গুম করারও চিন্তা করছিল তারা। কিন্তু লাশটি যে সুদুর চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছিল সেজন্য সেটা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এখন তাদের মাথায় বুদ্ধি এলো লাশটিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সেভাবেই তারা রমেলের লাশটি নিয়ে যায় পূর্বহাতিমারায়। সেখানে তারা লাশটি পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে আলামত নষ্ট করে ফেলে।
কিন্তু তারা জানে না যে পদ্ধতিতে তারা লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে সেটা চাকমা সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।
চাকমা সমাজে লাশ পোড়াতে হলে সেখানে নানা সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতে হয়। থাকতে হয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি। কিন্তু সেনাদের কি আর সেসব প্রয়োজন! তাদের প্রয়োজন রমেলকে ছাই করে ফেলা। কারণ রমেলের লাশটিই যে তাদের আতঙ্কে রেখেছে। কাজেই তাদের প্রয়োজন ছিল না সামাজিক-ধর্মীয় রীতি-নীতি কোন কিছুরই। তারা রমেলের লাশের উপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবুও সেনাদের ভয় কাটছে না। তারা এখন লোকজনকে ভয় দেখিয়ে ভয় দূর করতে চাচ্ছে।
জীবিত রমেল থেকে মৃত রমেলই যে শক্তিশালী তা সেনারা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে। রমেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়েই প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। লাশ পুড়িয়ে ফেলার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই বিক্ষুদ্ধ জনতা রাস্তায় নেমে পড়ে গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। ডাক দেওয়া হয়েছে সড়ক ও নৌপথ অবরোধসহ নানা কর্মসূচির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়। দেশের চিন্তাশীল সচেতন জনগণ এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দাবি উঠেছে রমেলকে হত্যার সাথে জড়িত নান্যাচর জোন কমাণ্ডার বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরসহ জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
সেনারা যতই ভয় দেখাক না কেন তাদের জন্য মৃত রমেল এখন ভয়ংকর রূপ নিয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ সেনারা তো একজন রমেলকেই খুন করে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে রমেলের শত শত হাজার হাজার আত্মা এখন সেনাদের ভয় দেখাচ্ছে। এই ভয়েই সেনারা এখন ভীত সন্তস্ত্র।
সেনাদের মনে রাখতে হবে পাহাড়ের যতদিন সেনাশাসন-নির্যাতন থাকবে ততদিন রমেলের এই শত শত হাজার হাজার আত্মা তাদেরকে ভয় দেখাবেই এবং তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করে যাবে।
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত ]
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।