রমেল চাকমা’র হত্যাকারী সেনাদের বিচার হবে কি?

0
21

।। পারদর্শী।।
রমেল চাকমা একজন কলেজ ছাত্র। আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (ডান চোখে দেখতে পায় না) এই ছাত্র নান্যাচর কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। নান্যাচর সদর থেকে তার গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। তাই সে পরীক্ষার সুবিধার্থে নান্যাচর উপজেলা সদরে একটি বাসা ভাড়া নেয়। সেখান থেকেই সে নিয়মিত পরীক্ষা দিচ্ছিল। একজন ছাত্র হিসেবে ছাত্র রাজনীতির সাথেও যুক্ত ছিল সে।

# রমেল চাকমা

৫ এপ্রিল পরীক্ষা না থাকায় সে নান্যাচর বাজারে (সেদিন হাটবার ছিল) গিয়েছিল তরিতরকারি ও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে ফিরছিল বাসার উদ্দেশ্যে। তখন আনুমানিক সকাল ১০টা। তাকে ঘিরে ধরলো হায়েনারূপী একদল সেনা সদস্য। এরপর তাকে মারতে মারতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলো তাদের আস্তানায়, নান্যাচর সেনা জোনে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তার উপর চালানো হলো মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন। যে যেভাবে পারে শরীরে বিভিন্ন স্থানে তাকে আঘাত করলো। এতে সে গুরুতর অসুস্থ ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

18056820_137383710133813_5624340111717871829_n (1)
# রমেল চাকমার মরদেহ

এরপর সন্ধ্যার দিকে সেনারা বিনা চিকিৎসায় তাকে নিয়ে আসে থানায় হস্তান্তর করতে। কিন্তু তার (রমেলের) শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে থানা কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রহণ করেনি। সেনারা অসুস্থ রমেলকে নিয়ে যায় উপজেলা হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাকে ভর্তি করেনি। কারণ তার অবস্থা ছিল মুমুর্ষ। এরপর সেনারা নিজেরা রমেলকে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাদের নজরদারি ও পুলিশের পাহারায় যেনতেনভাবে চিকিৎসা চলতে থাকে। এভাবে দুই সপ্তাহ ধরে চলে চিকিৎসা। তার অবস্থা দিন দিন অবনতি হতে থাকে। সর্বশেষ তাকে কিডনি চিকিৎসা করানো হয়। কিডনি রোগ বিভাগের ১৮নং ওয়ার্ডেই ১৯ এপ্রিল দুপুরে সে মারা যায়।

রমেল চাকমা’র মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। তার উপর কী নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে তার মৃত্যুর মাধ্যমেই তা সহজে অনুমান করা যায়। নির্যাতনের ফলে তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, মৃত্যুর পরও রয়ে গেছে তার শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন।

রমেল চাকমার পিতা কান্তি চাকমা ছেলেকে আটকের পর অমানুষিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের নিকট একটি লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। এতে তিনি তার ছেলের জীবন সংকটাবস্থার কথা তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে শোনা যায়নি।

অভিযোগ উঠেছে নান্যাচর জোনের জোন কমাণ্ডার বাহালুল আলম ও মেজর তানভীর-এর নেতৃত্বে ও তাদের নির্দেশেই সেনা সদস্যরা রমেল চাকমাকে বেপরোয়াভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের বর্বর নির্যাতনের কারণেই রমেল চাকমা’র এই অকাল মৃত্যু হয়েছে।

রমেল চাকমার মৃত্যুর পরও সেনাবাহিনী ক্ষান্ত হয়নি। তারা শেষ পর্যন্ত রমেল চাকমার লাশটিও ছিনতাই করে ফেলেছে। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনকে রমেলের মরা মুখটিও দেখতে দেয়নি। সামাজিক রীতি-রেওয়াজ তোয়াক্কা না করে, পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি ছাড়াই নিজেদের মতো করে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে লাশটি। এর চেয়ে নির্মম, নিষ্ঠুর আর কি হতে পারে?

কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা রমেল চাকমাকে বর্বর নির্যাতন করে মেরে ফেললো, লাশ ছিনতাই করে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেললো তাদের বিচার হবে কি? দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় তারা কি শাস্তি পাবে?

[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত ]

—————————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.