[ রাজা দেবাশীষ রায়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু এখানে প্রকাশ করা হলো–সম্পাদকমণ্ডলী]
বিগত কয়েকদিন নানা কারনে দেশের একাধিক শহরে গিয়েছি। শরীরও ভালো ছিলনা, মনও ভালো নয়। নেট-এ সামান্যতম উঁকিঝুঁকি ছিল মাত্র।। আজ রাঙায় ফিরলাম। বৃষ্টির আমেজ ভালোই লাগছিল। কিন্তু…
রমেল চাকমার খুনের দুঃসংবাদ আমার জানা ছিল। আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে এবিষয় ছাড়া বোধ হয় তেমন কোন বিষয়ে আলাপচারীতা হয়নি, যদিও চার দেয়ালের মধ্যে ছিলাম আমরা, বিগত ৩-৪ দিন ধরে। বলা বাহুল্য, আমরা দুজনেই অত্যন্ত উদবিঘ্ন, ভাবছিলাম আমাদের করনীয় কি। এখানে তেমন কিছু লিখতে চাইনা, কি ভাবছি, কি করবো। কিন্তু অবশ্যই আমরা বসে থাকবনা।
হয়তো খুব বেশী কিছু করতে পারবো না। তবে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে এ বিষয়টা ফেলে রাখা যাবে না। চুপ করে থাকা যাবেনা। এটা অন্তত জানি।
আমার সহধর্মিণীকে বললাম যে রমেলের পরিবারবর্গের কাছে জানাতে হবে যে তাঁরা একা নয় (সে পারলে আগামী কালই রওনা হয়ে যায় তার পরিবারের সাথে দেখা করতে)। রমেল যে দোষই করে থাকুক না কেন (তাও আমরা জানিনা তিনি কোন দোষ বা অপরাধ আদৌ করেছেন কিনা), তাঁর জীবনের ও মৌলিক নাগরিক অধিকারের এই পরিণীতি, কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর তিনি যদি কোন অরপরাধ করেও থাকেন, তা বিচার করার ক্ষমতা কেবল যথাযথভাবে ক্ষমতা-প্রাপ্ত আদালতের, অথবা সমাজের। কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নয়।
কল্পনা চাকমাদের লম্বা তালিকায় রমেলের নাম যোগ হোল। সে তালিকা যত লম্বাই হোক না কেন, সুবিচার একদিন হবেই। আমার জীবদ্দশায় নাহলেও! এটা আমার সরল বিশ্বাস।
রমেল চাকমার সাথে লাকি আখন্দের সম্ভবত কোন পরিচয় ছিলনা। লাকি ভাইকে আমি চিনতাম। তার ভাই হ্যাপিকেও। রমেলকে চিনতাম না। কিন্তু কাছাকাছির সময়ে দদুজনই প্রয়াত হয়ে আমার ও আরও অনেকের মনে তাঁদের স্মৃতি গেঁথে থাকবে। গড়মিলভাবে হলেও, এক সাথে।
আমার মায়ের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী আর ক দিন বাকি মাত্র। গানের জগতে মা অনেকটা পঞ্চাশের ও ষাটের দশকের সঙ্গীতে আঁটকে গেছিলেন। একটি ব্যতিক্রম ছিল লাকি আখন্দ। ৭০-এর দশকে যখন রাঙ্গামাটিতে প্রথম টেলিভিশন আসে, তিনি তাঁর তামাকের হুক্কা ফেলে ছুটে আসতেন, লাকির গান উপভোগ করতে। আমার সামান্যতম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ভাইও তাই। আমিও তাঁদের দলের মধ্যে পরি। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন, লাকি ভাই।
আরেকটি জগতে লাকি আখন্দের গান রমেল চাকমা শুনতে পাবেন কিনা, এবং রমেলের জুম্ম মানুষের অধিকারের কথা লাকি শুনতে পাবেন কিনা, তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের অনেকের কানেই লাকি আর রমেলের সুর, ছন্দ বা অধিকারের ঝংকার কানে বাজতে থাকবে, অনেক দিন ধরে, মিত্রাক্ষর, অমিত্রাক্ষর বা অন্য কোন ছন্দে!
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।