রাঙামাটিতে প্রতিবাদী গান, কবিতায় লংগদু গণহত্যার স্মরণ

0

রাঙামাটি প্রতিনিধি।। রাঙামাটিতে প্রতিবাদী গান ও কবিতায় লংগদু গণহত্যার স্মরণ অনুষ্ঠান করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

গতকাল ৪ মে ২০২১, মঙ্গলবার রাঙামাটি সদর উপজেলা এলাকায় লংগদু গণহত্যার ৩২ বছরপূর্তিতে এ স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শিশু-কিশোরসহ এলাকার জনগণ স্বতঃফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

‘সহস্র শোক জ্বেলে দিক প্রতিবাদের অগ্নিমশাল’ এই শ্লোগানে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অংকন চাকমা। অনুষ্ঠান শুরুতে শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে “লংগদু গণহত্যা : বিচারহীনতার ৩২ বছর” শীর্ষক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা।

লিখিত বক্তব্যে রিপন জ্যোতি চাকমা বলেন, গণহত্যা হচ্ছে মানুষের দ্বারা হওয়া অত্যন্ত জঘণ্যতম অপরাধ। সৃষ্টির আদিকাল থেকে অত্যন্ত  হীন উদ্দেশ্যে গণহত্যা সংঘটিত হয়ে আসছে। দাস সমাজ ব্যবস্থায় এ গণহত্যার সূত্রপাত হলেও আধুনিক যুগের রাষ্ট্র, জাতি, শাসকগোষ্ঠীর উগ্র জাতীয়তাবাদ, সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদ কায়েম করার মানসে এটি কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। উদ্দেশ্যেমূলকভাবে অধিকারকামীদের ব্যাপক খুন-গুম, হামলা-লুটপাট করে আন্দোলন দমন করার কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। উগ্র বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী, সম্প্রসারণবাদী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ পর্যন্ত ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এতে সদ্য ভূমিষ্ট শিশু থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অত্যন্ত নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। লংগদু গণহত্যাও তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গণহত্যা। যেখানে প্রায় ৬ টির মতো পাহাড়ি অধ্যুষিত গ্রামে হামলা,লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। যার কোন প্রকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত বা আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এতে তিনি আরো বলেন, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই সংগ্রাম করা প্রতিটি জাতির ইতিহাসের তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি স্মরণ করা দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের বৃটিশ, মোঘল শাসকদের মতো পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব জাতি আন্দোলন সংগ্রামে সফল হয়েছে তারা পূর্বসুরী পরাক্রমশালী বীরদের প্রতিনিয়ত স্মরণ, তাদের আদর্শ লালন, চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সফলতার দিকে ধাবিত করেছে।

তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাওয়া বীরদের এবং ডজনের অধিক গণহত্যার ঘটনাগুলো গুরুত্বের সহিত স্মরণ করতে হবে। বিচারের দাবি তুলতে হবে সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে মুক্তির দিশা খুঁজে নিতে হবে। পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লড়াইকে বেগবান করতে হবে।

জিকো ত্রিপুরা তার বক্তব্যে বলেন, শিল্প, সংস্কৃতি আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। পার্টি এবং জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়াতে হবে।

এরপর ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে…’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু করা হয়।

অনুষ্ঠানে তুষি চাকমা আবৃত্তি করেন ‘অঘা মানে’ নামের কবিতা। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কামাল পাশা’ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতা আবৃত্তি করেন রুপসী চাকমা। ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী কাতারাং নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী মেকি চাকমা।

এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রতিবাদী ও দেশাত্ববোধক বিভিন্ন গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন তুলতুল, মিতালী, রিপনা, ঈশা, প্রিয়াংকা, বিকাশ ও রুপক চাকমা প্রমুখ।

শেষে সমবেত কন্ঠে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গানের সাথে সাথে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More