রাঙামাটিতে শান্তি র‌্যালি, ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা

1
6

সিএইচটিনিউজ.কম
Rangamati Shanti rally, 13 Jan 2015রাঙামাটিতে গত ১০ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির বিশেষ জরুরী সভা শেষে এক শান্তি র‌্যালি কোর্ট বিল্ডিং প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে বনরূপা বাজার ঘুরে পূনরায় কোর্ট বিল্ডিং-এ সমাপ্ত হয়। র‌্যালিতে জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফিন ছাড়াও জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ও এমপি ঊষাতন তালুকদার, মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, আওয়ামী লীগ নেতা দীপঙ্কর তালুকদার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে, শান্তি র‌্যালির বিরুদ্ধে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

উৎপল খীসা তাঁর ফেসবুক নোটে লেখেন “…. এটা প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত যে, আজ যারা শান্তি মিছিল করছে তারাই তো আমাদের পাহাড়ের মূল শান্তি বিনষ্টকারী। তারাই তো অশান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চক্রান্তকারী। কাজেই এদের মুখ থেকে নিয়ত আইন শৃঙ্খলা শান্তি প্রতিষ্ঠার বুলি ঝরলেও প্রকৃতপক্ষে সকল অশান্তির মূলে তারা সম্পৃক্ত। তাই সে পক্ষে থাকার প্রশ্নই উঠে না…। সেসবের পক্ষে থাকা মানে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল বসানো। 
জুম্মদের উচিত এমন শান্তি মিছিলকারী, আয়োজক, তাবেদার জুম্ম নামে কুলাঙ্গার শাসকদের সমাজ থেকে চূড়ান্ত বয়কট করা।
এটা ঠিক যে, আজ যারা তথাকথিত শান্তি মিছিল করছে তারা সংখ্যায় খুব অল্প নয়। তাদের হাত সমাজ রাষ্ট্রের উপরতলা হতে নিচতলা পর্যন্ত বিস্তৃত। জুম্ম দাবীদার এদের কিছু অংশ হয়ত আজ প্রত্যক্ষভাবে মিছিলে গিয়েছে কিন্তু একটা বড় অংশ সমাজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। 
প্রগতিশীল রাজনৈতিকদের উচিত সমাজে তাদের চিহ্নিত করার কাজ এগিয়ে নেয়া। নতুবা জুম্মরা কেবল প্রতারিত, লাঞ্চিত, বঞ্চিত হবে। এমনি করে একসময় তারা চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।…”

অমিত হিল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন “শান্তি কখনো শান্তি মিশিলের মাধ্যমে অর্জিত হয় না, বরং শান্তি স্থাপনের জন্য যেসব উপাদানের দরকার সেগুলোকে গ্রহণ ও চর্চার মাধ্যমে শান্তি (যদিও ‘শান্তি’ শব্দটি আপেক্ষিক) অর্জন হতে পারে ।
শান্তকরণ/সন্ধিস্থাপন (Pacification) এর জন্য নির্দিষ্টকিছু শর্ত থাকে । একপাক্ষিকভাবে কখনো সন্ধিস্থাপন সম্ভব নয়। তবে অনেক সময় বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের শক্তির জোর কাটিয়ে বিবাদমান সমস্যাগুলোকে শান্ত করতে চায়, তাও অবশ্যেই জবরদখলের শান্তকরণ নীতি বটে।
পাহাড়ের দীর্ঘ গেরিলা যুদ্ধকে অবসান করার জন্য “পার্বত্য চুক্তি” করা হয়েছিল । সেজন্য যাকে শান্তি চুক্তিও বলা হয় । পাহাড়ে শান্তি প্রতিস্থাপনের জন্য সেখানেও নিদির্ষ্ট কিছু শর্ত ছিলো । কিন্তু রাষ্ট্রীয় দ্বৈতনীতি সেসব শর্তকে ভঙ্গ করে চুক্তির পরবর্তী সময়েও সেটেলারের কর্তৃক পাহাড়ী আদিবাসীদের ওপর বহু সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিকান্ড, হত্যাকান্ড ও ভূমিদখলের ঘটনা ঘটিয়েছে । তবু শান্তি চুক্তির নামটিকে সম্মুন্নত রাখার জন্য প্রশাসন বারবার সাম্প্রদায়িক হামলার পরমুহূর্তে “শান্তি মিশিল” নামে রাজনৈতিক চক্রান্ত এটেঁছে, এখনো তা করে যাচ্ছে । আর কিছু সুবিধাবাদী – স্বার্থন্বেষী জুম্ম সম্প্রদায়ও নিজেদের সুবিধাভোগের সুবিধার্তে সেসব খেলায় প্রশ্নহীনভাবে গা ভাসিয়ে দিয়েছে ।
প্রতিবারই আমরা লক্ষ্য করি যে, পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক হামলায় সিংহভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হয় পাহাড়িরা । অনেকে ঘরহারা হয়ে যান, অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হন, অনেকের মৃত্যু হয়, আর অনেকে গ্রেপ্তারও হন । সেসকল ভিক্তিমদের সহযোগিতা কিংবা তাদের পক্ষে ন্যায্য মানবিক দাবী তোলার বদলে, স্বার্থপরের মতো কিছু সুবিধাবাদী কিট প্রশাসনের সেই চক্রান্তে লেঠে পড়ে । তাতে ভিক্তিমদের ন্যায্য পাওনা – দাবী ধামাচাপা পড়ে যায় ।
সেজন্য “শান্তি মিশিল” নামক সাম্প্রদায়িক প্রশাসনের লীলাখেলাকে বারবার বর্জন করি, তাতে অবশ্য সুবিধাবাদীদের মুখোশও কষে যায় । অনেকের তাতে গায়েও লাগে ।”

প্রতিভাস চাকমা তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, “শান্তি!!! মিছিলে যারা অংশ নিয়েছে প্রত্যক ক্ষয়ক্ষতির, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথাও মেডিকেল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয় স্থাপন হলে, আবারো সেটলারদের কর্তৃক জুম্মরা হামলার স্বীকার হলে এরাই দায়ী থাকবে।”

Invincible Indigenous Sunny নামে একজন মন্তব্য করেছেন “ঊষাতন কিভাবে যেতে পারলো। ওরা অবরোধ ডাকবে, ওরা শান্তি মিছিলে যাবে, এটা কোন ধরনের রাজনীতি। …।(Usaton kivabe jete parlo. Ora aborodh dakbe, ora santi misile jabe. Eita kon doroner rajniti. Tahole aborodh deke jummader 2 rat na jagiye ahoto korar ki dorkor silo).

জুনান চাকমা (Junan Chakma) তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন  “সন্তু লারমার জেএসএস’র আন্দোলনের দৌঁড় দেখা গেলো। মোল্লার দৌঁড় মসজিদ পর্যন্ত। সন্তু লারমা দলের আন্দোলনের দৌঁড় শান্তি মিছিল পর্যন্ত। আসলে রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত দাঙ্গা সরকারের সন্তু লারমা গ্রুপ ও দীপঙ্কর তালুকদার গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। সন্তু বাবুরা এভাবেই তথাকথিত শান্তিচুক্তি করে, শান্তি মিছিল করে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে শেষ করে দেয়।”

Porantu Chakma নামে একজন মন্তব্য করেন “এই শান্তির নামক মিছিলে যারা যারা জুম্ম অংশ নিয়েছেন তাদেরকে দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করলে আমার মনে হয় ভূল বলে কিছু হবে না ।নির্দ্ধিধায় বলা যায় এদেরস পকেট আজ ভারি হয়েছে ।”

Kap Cma নামে একজন মন্তব্য করেন, “শান্তি মিছিল করে লাভ কি….এটা একটি সরকারের নতুন থিওরি….”

Patturuturu Chakma নামে একজন মন্তব্য করেন “লাঠি মারি শান্তি মিছিলকে। না জানি আরও কোন অপকৌশল নেওয়ার পরিকল্পনা করছে শাসকশ্রেণী।”

Dipta Wangza নামে অপর একজন মন্তব্য করেন “সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তারপরে শান্তি মিছিল অত:পর মন মাতানো কনসার্ট।।শান্তি মিছিলের ব্যানারে লেখা থাকবে -“পাহড়ি -বাঙ্গালি ভাই ভাই আমরা সবাই শান্তি চাই”। ইজ দিজ অল বুলশিট? সরকার এই সবই তো করছে।”

Nayan Chakma নামে একজন ঊষাতন তালুকদারকে সমালোচনা করে মন্তব্য করেন ” আমি একটা কথা বলতে চাই। আমি জেএসএসকে সমর্থন করি । তাই বলে জেএসএস এর অন্যায় মেনে চলবো তা নয়। প্রয়াত নেতা এমএন লারমার আদর্শের সাথে উষাতনের আদর্শের মিল খুজে পেলামনা। তিনি এখন বেঈমানের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আজকের শান্তি মিছিলে যোগ দিয়ে আর তার আগে সংসদ থেকে ওয়াক আওট না করে। উষাতন তালুকদার এখন ক্ষমতালোভি।”

অন্যদিকে, ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাঙামাটি শহরে জারিকৃত কারফিউ মঙ্গলবার তুলে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিকাল ৫টা থেকে আবারো ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে।
—————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.