চট্টগ্রাম : রাঙামাটির বিলাইছড়িতে দুই মারমা কিশোরী বোনকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
“যৌন নিপীড়ন ও যৌন সন্ত্রাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও” এই শ্লোগানে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) বিকাল ৩টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এসময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা “যৌন নিপীড়ন নিয়ে মেডিক্যাল রিপোর্টের তালবাহানা বন্ধ কর”, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর”,Why two teenage marma sisters raped by Military personnel in Bilaichari?”, “Give exemplary punishment to the Rapists military personnel” সহ বিভিন্ন দাবিনামা সম্বলিত প্লাকার্ড বহন করে।
মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি থুইক্যসিং মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি চবি শাখার সভাপতি সুনয়ন চাকমা, নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন’র নগর শাখার সভাপতি লোকেন দে, বিএমএসসি নগর অঞ্চলের নেতা মংক্যনু মারমা, প্রমাছাসের চবি শাখার নেতা উজ্জ্বল মারমা। সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্র নেতা রুপন চাকমা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নগর শাখার নেত্রী রিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেত্রী মাদ্রী চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল রেখে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছিন্ন অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও কোন প্রয়োজন ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে সেখানে অঘোষিত সেনাশাসন জারি রয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি নারী অপহরণ, ধর্ষণ খুনসহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। পাহাড়ে মানবাধিকার লংঘনের সাথে জড়িত সেনাসদস্যদে আইনের আওতায় না এনে শাসকগোষ্ঠী বিচারহীনতা সংষ্কৃতি চর্চা করেই চলেছে। এই অপসংষ্কৃতি পাহাড় ছাড়িয়ে সমতলে ছড়িয়ে পড়ায় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট মত সেনা নিয়ন্ত্রিত সুরক্ষিত এলাকায় সোহাগী জাহান তনুর জীবন প্রদীপ অকালে নিভে গেছে। চলমান এ বিচারহীনতা সংষ্কৃতির কারণেই সম্প্রতি পাহাড়ে পুনরায় সেনাবাহিনী কর্তৃক দুই পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে প্রকৃত অপরাধী সেনাসদস্যদের বাঁচানোর জন্য শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র করছে। ভিকটিমদেরকে হাসপাতালে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। মেডিক্যাল রিপোর্টের উপর আদালতের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে রাঙামাটির সিভিল সার্জন শহীদ তালুকদারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সেনাশাসনের বিরুদ্ধে দল মত নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত জনগণের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত যৌন সন্ত্রাসের ঘটনাগুলোকে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ পাহাড় থেকে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহারের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।