সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত এইচডব্লিউএফের দুই নেত্রীকে উদ্ধারের দাবিতে

রাঙ্গামাটির কুদুকছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ

0
8

রাঙ্গামাটি : সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষিত সন্ত্রাস বন্ধ, কুখ্যাত সন্ত্রাসী, খুনী, পলাতক আসামি তপনজ্যোতি চাকমা (বর্মা) ও তার সহযোগিদের গ্রেফতার এবং সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত এইচডব্লিউএফ এর দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে দ্রুত অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে রাঙ্গামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম(ডিওয়াইএফ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ)।

আজ ২২ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায়  বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয় গেইট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি কুদুকছড়ি বাজারের গুরুত্ব সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূনরায় বিদ্যালয় গেইটে এসে  প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। বিক্ষোভে জেলার বিভিন্ন উপজেলা হতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি কুনেন্টু চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আসেন্টু চাকমার পরিচালনায় প্রতিবাদি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি নিকন চাকমা, ডিওয়াইএফের রাঙ্গামাটি জেলা শাখা সদস্য পাইশিলা মারমা ও এইচডব্লিউএফের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি রুপসী চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি সরকারের আমলেই পার্বত্য চট্রগ্রামকে বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত অঞ্চলে পরিণত করে রাখা হয়েছে। এ অঞ্চলে অঘোষিতভাবে জারি রাখা হয়েছে সামরিক শাসন। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ জনগণের ওপর দমন-পীড়ন, নারী নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন গুম যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ১১দফা নির্দেশনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্রগ্রামে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে পাহাড়ি জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর সর্বোচ্চ ক্ষমতা এবং লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে সরকার।

বক্তারা আরো বলেন, সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে চিরতরে স্তদ্ধ এবং পাহাড়িদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের আরেকটি অপকৌশল হচ্ছে বিভিন্ন নাম দিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টি করে আভ্যন্তরীণ সংঘাত জিইয়ে রাখা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ নভেম্বর সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সৃষ্টি করা হয় নব্যমুখোশ বাহিনী। এই  নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা সেনা সহায়তায় গত রবিবার কুদুকছড়ির আবাসিকে ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা করে এইচডব্লিউএফের দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে যুবনেতা ধর্মশিং চাকমাকে জখম করে এবং একটি ছাত্র মেস পুড়িয়ে দেয়।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অপহৃতএইচডব্লিএফের  দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অতি দ্রুত অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবীসহ অপহরণের সাথে জড়িত চিহ্নিত কুখ্যাত সন্ত্রাসী, খুনী, পলাতক আসামি তপনজ্যোতি চাকমা(বর্মা) ও তার সহযোগিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

উল্লেখ, গত ১৮ মার্চ, রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় সেনা-সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা রাঙ্গামাটি সদরের কুদুকছড়ি আবাসিক এলাকায়  গণসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ব্রাশফায়ার করে। এতে পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি কুনেন্টু চাকমা জীবন নিয়ে পালাতে সক্ষম হলেও যুবনেতা ধর্মশিং চাকমা পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।  সন্ত্রাসীরা একটি ছাত্রমেসে অগ্নিসংযোগ করে এবং এইচডব্লিউএফের দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পাঁচ দিন অতিবাহিত হতে চললেও অপহৃত দুই নেত্রীর হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উদ্ধারের কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

——————————

সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.