রামগড়ের হাতিমুড়ায় সেটলার কর্তৃক ১১০ একর জমি বেদখলের চেষ্টা

0
21

সিএইচটি নিউজ ডটকম
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার হাতিমুড়ায় সেটলাররা আনুমানিক একশত দশ একর জমি বেদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে সেখানে ৩ সেটলার পরিবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। গত জুলাই  মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেদখল প্রক্রিয়া শুরু হয়।

Land grabbibgবাতনাটলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আম্ম্যে মারমা সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, “যে এলাকাটি সেটলাররা জোরপূর্বক দখল করেছে তার নাম ডলুপাড়া। এই পাড়ায় একসময় ১৫-২০ পরিবার পাহাড়ি বসবাস করতো। ৮০ দশকে ব্যাপক সেনা-সেটলার হামলার সময় তারা ভারতে শরণার্থী হতে বাধ্য হন। পার্বত্য চুক্তির পর দেশে ফিরে এসে তারা তাদের ঐ গ্রামে যেতে চাইলে বারবার বাধা দেয়া হয়। সে কারণে তারা এখন উত্তর ডুলু, মরা ডুলু, ফকির নালা ও উত্তর হাফছড়িতে পরবাসীর মত দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।”

ভূমি মালিকদের মধ্যে সরকারী রেশনকার্ডধারী শরনার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু করেছেন বলে তিনি জানান।

গ্রামবাসীরা জানান সেনাবাহিনীরা প্রত্যক্ষ সহায়তায় এমাদুল হক(৩৯) পীং মৃত আলেফ শরীফ, আব্দুর রাজ্জাক(৩৪) পীং মুত মিন্নাত আলী ও মো: বাবুল(২৩) পীং মৃত আক্কাশ মিঞা পাহাড়িদের ঐ জমিতে ঘরবাড়ি তৈরি করে। এই জমিতে মোট ২২ টি সেটলার পরিবারকে বসানো হবে বলে তথ্য রয়েছে।

অপর এক জনপ্রতিনিধি বলেন, সেনারা প্রতিদিন টহলের নামে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে, যাতে লোকজন  সংগঠিত হয়ে অন্যায় ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে। যাদের জমি বেদখল করা হচ্ছে তাদের কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ১. অংহ্লা মারমা (৬৫), পিতা- মৃত  মংসাই মারমা ২. উহ্লাসাইন মারমা (৫০) পিতা- মৃত আরুইঅং মারমা ৩. হ্লাচাই মারমা (৬৩) পিতা- মৃত পাইনখই মারমা ৪. সুদঅং মারমা (৬০) পিতা- মৃত মংসাইন মারমা ৫. রেম্রাচাই মারমা(৩০) পিতা-অংগ্যচাই মারমা(মৃত) ৬. লাব্রেচাই মারমা (৫০) পিতা- বদং মারমা(মৃত) ৭. রুইউচাই মারমা, পিতা-অজ্ঞাত।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক প্রদীপন খীসা এক বিবৃতিতে এই ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সেনাবাহিনীর সহায়তায় পাহাড়িদের ঐ জমিতে সেটলাররা জোরপূর্বক দখল করে ঘর নির্মাণ করার পর থেকে সেনাবাহিনী প্রায় প্রতিদিন ঐ এলাকায় টহলের নামে পাহাড়িদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে, যাতে তারা এই অন্যায় ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে কোন ধরণের প্রতিবাদ সংঘটিত করতে না পারে।”

প্রদীপন খীসা আরো বলেন, “মানিকছড়ি-রামগড়-মাটিরাঙ্গা এলাকায় ভূমি বেদখল তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিন আগে মানিকছড়ির বক্রিপাড়া ও মনাদং পাড়ায় ২০ একর জমি বেদখলের চেষ্টা চালানো হয়। স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদের মুখে বেদখলকারীরা আপাতত: সরে যেতে বাধ্য হলেও, প্রশাসন নতুন করে ঐ জমি দখলে সহযোগিতা দেয়ার জন্য একটি পুলিশ পোষ্ট বসানোর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

ডলুপাড়ায় সেটলারদের নতুন করে ভূমি বেদলের ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে উল্লেখ করে প্রদীপন খীসা অবিলম্বে ডলুপাড়া থেকে অবৈধ দখলদার সেটলার পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

এছাড়া তিনি উক্ত জমিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করা পাহাড়িদের তাদের নিজ বসতভিটায় ক্ষতিপূরণসহ পূনর্বাসনেরও দাবি জানান।
————————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.