বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
রুমা : বান্দরবানের রুমায় সেনানিবাসের জন্য ৯,৫৬০ একর জমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আজ ৮ নভেম্বর সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
পানতোলা মৌজার হেডম্যান নুমলাই ম্রোর সভাপতিত্বে রুমা উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গ্যালেংগা ইউপির ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার মংসাচিং মারমা, হেডম্যান চামঅউ মারমা ও সেংগু মৌজার রুমাচর পাড়ার কার্বারী ক্যাচিং প্রু মারমা।
রুমা উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ-এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে বক্তারা রুমা সেনা গ্যারিসন সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানান এবং বলেন, জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করা না হলে ডিসি অফিস ঘেরাও সহ বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে।
তারা বলেন, ১৯৭৭ সালে রুমা গ্যারিসন ক্যাম্প সেনানিবাসে উন্নীত করণের জন্য ৯,৫৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে গ্যালেংগা মৌজায় ২,৪৮০ একর, পান্তলা মৌজায় ৩,৮০০ একর ও সেংগুম মৌজায় ৩,২৮০ একর রয়েছে। কিন্তু তৎকালীন ভূমি মন্ত্রণালয় ব্যাপক পরিবেশগত ও অন্যান্য ক্ষতির দিক বিবেচনা করে উক্ত অধিগ্রহণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়নি।
কিন্তু সেনাবাহিনী উক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য ১৯৯১ সালে আবার ততপরতা শুরু করে। সেনাবানিহীর এম.ই.ও শাখা রুমা গ্যারিসন ক্যাম্পকে সেনানিবাসে উন্নীত করণের ঘোষণা দেয়ার জন্য থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তা ৯,৫৬০ একর এলাকায় ৬৫৫টি পরিবারের ৪,৩১৫ জন পাহাড়ি, ১,৫৬৯.০৬ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ও ৪ হাজার একর বনবিভাগের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মতামত প্রদান করেন। ১৯৮৮ সালে জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ তদন্তেও অধিগ্রহণের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়।
বিগত জরুরী অবস্থার সময় ২০০৭ সালে উক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য পুনরায় চেষ্টা চালানো হয়, কিন্তু জনগণের প্রবল আপত্তি ও বিরোধীতার কারণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর দীর্ঘদিন এ ব্যাপারে চুপচাপ থাকলেও কয়েক মাস আগে লে. ক. ওয়াসিম বাঘাইহাট থেকে রুমা ক্যান্টনমেন্টে বদলী হলে নতুন করে এই প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে।
বক্তরা আরো বলেন, উক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হলে সেংগুম মৌজার ৬টি ও পান্তলা মৌজার ৯টি গ্রাম পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং প্রথমোক্ত মৌজার ১৮৫ পরিবার ও পান্তলা মৌজার ১৩০ টির অধিক পরিবার উচ্ছেদের শিকার হবে। সেংগুম মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হলো, বটতলী পাড়া, আমতলী পাড়া, রয়েল পাড়া, ময়ুর পাড়া, নামেই পাড়া ও লামা পাড়া। পান্তলা মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হলো পান্তলা পাড়া, বাসন পাড়া, চধুই পাড়া, নমলাই হেডম্যান পাড়া, চিংপ্রু পাড়া, মেনধুই পাড়া, রুইপিয়া পাড়া, টাইচুম পাড়া ও লাম্পুং পাড়া। সর্বমোট ৪ হাজার মারমা, ত্রিপুরা ও মুরুং পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর পরিবেশগত ক্ষতিও হবে ভয়াবহ। কারণ সেখানে বনবিভাগের বাগানসহ ব্যক্তি মালিকানাদিন বাগানের হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা ধ্বংস হবে। এছাড়া যে হাজার হাজার পরিবার উচ্ছেদের শিকার হবেন তাদের পুনর্বাসনের জন্য বাড়তি জমি পাওয়া যাবে না। ফলে জমির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হবে, জুম চাষের ওপর নির্ভরশীলতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর জীবিকা ও জীবন ধারণ মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হবে।
বক্তারা বিডিআর হেডকোয়ার্টারের জন্য রুমা থানায় ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ারও বিরোধীতা করেন এবং বলেন, লোকালয়ে এ ধরনের ক্যাম্প স্থাপনের ফলে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
সমাবেশের আগে একটি মিছিল রুমা বাজার প্রদক্ষিণ করে উপজেলা মিলনায়তনে যায়। মিছিল ও সমাবেশ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে।