লংগদুতে ইউপিডিএফের আলোচনা সভা, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি গঠন

0

লংগদু প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১৭ মে ২০২৩

লংগদুতে ইউপিডিএফের উদ্যোগে আলোচনা সভার আযোজন করা হয়।

রাঙামাটির লংগদুতে ইউপিডিএফের লংগদু-বরকল ইউনিটের উদ্যোগে চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে “জেএসএস কর্তৃক সমঝোতা লঙ্ঘন ও সাধারণ জনগণের করণীয়” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ মে ২০২৩) অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ’র লংগদু ইউনিটের সংগঠক চন্দন চাকমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র জেলা সংগঠক শ্রাবণ চাকমা, নান্যাচর উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক সুকীর্তি চাকমা এবং এলাকার মুরুব্বী কৃষ্ণমনি চাকমা ও অমর সিংহ চাকমা। সভা সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ সদস্য নিবিড় চাকমা।

সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে ইউপিডিএফ সংগঠক শ্রাবণ চাকমা দীর্ঘ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, পার্টি গঠনের আগে ১৯৯৮ সালের ৪ এপ্রিল জেএসএস’র লেলিয়ে দেয়া দুর্বৃত্ত কর্তৃক খাগড়াছড়ির পানছড়িতে প্রদীপ লাল ও কুসুমপ্রিয় চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত শুরু হয়। এমতাবস্থায় ১৯৯৯ সালে জেএসএস-ইউপিডিএফের মধ্যে দীঘিনালা সমঝোতা চুক্তি হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আবারো দুই পার্টি সমঝোতায় উপনীত হয়। কিন্তু জেএসএস কোন ধরনের উস্কানি ছাড়া বার বার সমঝোতা লঙ্ঘন করে আসছে। তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না। তিনি সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র এমন সংঘাতমূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন এবং ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে জনগণকে সর্বাত্মক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

ইউপিডিএফ’র নান্যাচর ইউনিটের সমন্বয়ক সুকীর্তি চাকমা বলেন, জেএসএস ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রেখে কাকে লাভবান করতে চাচ্ছে? এই সংঘাত পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ আমরা কেউই লাভবান হচ্ছি না। লাভবান হচ্ছে শাসকেগোষ্ঠি। এই সংঘাতের ফলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠছে না, ফলে আন্দোলনও অগ্রসর করা যাচ্ছে না। এতে করে জাতির অস্তিত্ব আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জেএসএস কেন ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করতে চাচ্ছে না?

সভায় উপস্থিত লোকজনের একাংশ।

তিনি দেশের চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন নেই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে এখন দলীয়করণ করা হয়েছে। তার প্রভাব আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামেও বিদ্যমান। ফলে ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, খুন, গুম পাহাড়ে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ পাহাড়ি জনগণের ওপর অন্যায়-অবিচারের তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের পথ পরিহার করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে সামিল হতে সন্তু লারমার জেএসএস’র প্রতি আহ্বান জানান।

এলাকার মুরুব্বী কৃষ্ণমনি চাকমা বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি-হানাহানিতে আমরা জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা আর এই সংঘাত চাই না। মারামারি হলে আমরা সাধারণ জনগণই বেশি ভোগান্তির শিকার হই।

আরেক মুরুব্বী অমর সিংহ চাকমা বলেন, আমরা অচিরেই এই সংঘাত বন্ধ হোক এই প্রত্যাশা করি। কারণ আমাদের সাধারণ জনগণ এখন বোবার মতো হয়ে গেছি। কারোর পক্ষেই আমরা কথা বলতে পারি না। কারণ সত্য কথা বললে অন্য পক্ষ এসে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। এটাই আমাদের সবচেয়ে ভয়, আতঙ্কের। আমরা এই সংঘাত থেকে মুক্তি চাই।

সভাপতির বক্তব্যে চন্দন চাকমা বলেন, আমাদের আর মারামারি হানাহানি নয়। জাতি এখন অস্তিত্ব সংকটে। সরকার-রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদেরকে ধ্বংস করতে প্রতিনিয়ত অন্যায়-অবিচার, দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এখন দরকার সরকার-রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা। এই সংঘাত চলমান থাকলে শাসকগোষ্ঠী আমাদের ভূমি কেড়ে নেবে, দখল করবে, অন্যায় দমন-পীড়ন চালাবে, নারী ধর্ষণের মতো ঘটনা সংঘটিত করবে, কোন বাধা বিঘ্ন ছাড়া খুন, গুম নির্বিচারে করে যাবে। তাই জেএসএস’র উচিত সংঘাত-হানাহানি বন্ধ করে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।

হাত উঁচিয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটিকে সমর্থন জানাচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা

সভায় উপস্থিত লোকজনের সম্মতির ভিত্তিতে চলমান সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে লংগদু-বরকল উপজেলা সমন্বয়ে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। এতে বাসুকী চাকমাকে সভাপতি ও বসুদেব কার্বারীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

সভায় ১৬টি গ্রামের (পাগলীছড়া, বরকলক, তন্যাছড়ি, শিলছড়ি, উকছড়ি, পেত্যাছড়ি, রূপবান, দিঘোলছড়ি, পানছড়ি, গরুখেইয়ে, হাজাছড়ি, ছোট কাট্টলী, বড় কাট্টলী, বড়াদাম, ভেঙ্গীছড়া, বামে খাড়িকাবা, মধ্য খাড়িকাবা, বড় খাড়িকাবা, ভেইবোনছড়া, গলাছড়ি, রণছড়া, বোধনীছড়াসহ) বিশিষ্ট ব্যক্তি, কার্বারী, মুরুব্বীসহ প্রায় ৫ শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More