লক্ষ্মীছড়িতে সদ্য কারামুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে গণসংবর্ধনা
লক্ষ্মীছড়ি : সদ্য কারামুক্ত লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে গণসংবর্ধনা দিয়েছে সুপার জ্যোতি চাকমা মুক্তি সংগ্রাম কমিটি ও লক্ষ্মীছড়ি এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।
আজ বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭) বেলা ২টায় মানিকছড়ি হতে মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা মাধ্যমে সুপার জ্যোতি চাকমা বান্যাছোলা গ্রামে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এরপর উপজেলা মাঠে সুপার জ্যোতি চাকমা মুক্তি সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে মূল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা, তিন ইউপি চেয়ারম্যানগণ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি থানা শাখার সহ সভাপতি কিরণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য সমর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের লক্ষ্মীছড়ি থানা শাখার অর্থ সম্পাদক চন্দনা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের লক্ষ্মীছড়ি থানা শাখার সহ সভাপতি তৃশা চাকমা, হেডম্যান এসোসিয়েশনের লক্ষ্মীছড়ি শাখার সাধারণ সম্পাদক জ্ঞান লাল তালুকদার, কার্বারী এসোসিয়েশনের লক্ষ্মীছড়ি শাখঅর সভাপতি অসীম চাকমা, সচেতন জনতার পক্ষে স্বপন চাকমা, বিভিন্ন বিহার, ক্লাব, স্কুল ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ ফুল দিয়ে সুপার জ্যোতি চাকমাকে সংবর্ধনা জানান ও বরণ করে নেন। অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজারো জনতা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সুপার জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হওয়া সত্বেও আমাকে অন্যায়ভাবে আটক ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় যে, এই এলাকার তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ কতটা অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছেন।
ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ অন্যায়ভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্য তিনি সরকার ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন।
তিনি তাঁর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালনের জন্য এলাকার জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এদিকে, মরাচেঙ্গী এলাকা থেকে শত শত জনতা উপজেলা মাঠে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসার পথে সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেয়। এরপর বাদী পাড়া হতে জনতা ব্যান্ড বাজিয়ে শিলাছড়িতে লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশে জড়ো হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেন।
এছাড়া যতীন্দ্র কার্বারী পাড়া, বাইন্যাছোলাসহ বিভিন্ন স্থানে সেনারা জীপগাড়ি যোগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার সময় লোকজনকে বাধা দেয় এবং গাড়ির চাবি কেড়ে নেয় বলে জানা গেছে। উপজেলা পরিষদ মাঠে আয়োজিত মূল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও সেনা সদস্যদের সশস্ত্র উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ২টায় লক্ষ্মীছড়ি জোনের একদল সেনা সদস্য উপজেলা সদরের সরকারি বাসভবন ঘেরাও করে দরজা ভেঙে ‘অস্ত্র উদ্ধার নাটক’ সাজিয়ে সুপার জ্যোতি চাকমাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে সেনা জোনে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন সকালে তাঁকে লক্ষ্মীছড়ি থানায় হস্তান্তরের পর মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
দীর্ঘ একমাস কারাভোগের পর গতকাল (১ ফেব্রুয়ারি) তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। গঠিত হয় সুপার জ্যোতি চাকমা মুক্তি সংগ্রাম কমিটি। খাগড়াছড়ি পুরো জেলায় পালিত হয় অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি।
সুপার জ্যোতি চাকমার মুক্তির দাবিতে গত ৩ জানুয়ারি লক্ষ্মীছড়ি সদরে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে সেনা-সেটলার হামলার প্রতিবাদে ঘোষণা করা হয় লক্ষ্মীছড়ি বাজার বয়কটের, যা এখনো আব্যাহত রয়েছে।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।