লেমুছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি বেদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক অবরোধ

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার লেমুছড়িতে গতকাল সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি বেদখলের প্রতিবাদে স্থানীয় এলাকাবাসী আজ ৬ ডিসেম্বর ২০১০ খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক অবরোধ করে। লেমুছড়ি, বদানালা, নোয়াপাড়া ও ২৪ মাইল এলাকায় স্বতঃস্ফুর্তভাবে এলাকার জনগণ সড়ক অবরোধ করে রাখে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ অবরোধ চলে। এছাড়া বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পাহাড়িদের জায়গায় সেটলারদের অবৈধভাবে তৈরি করা ঘরগুলোও ভেঙে দেয়।

এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ শুরু করলে সকালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক আনিস-উল হক ভূঁইয়া এলাকা পরিদর্শনে যান। এ সময় জায়গার মালিকরা তাদের দলিলপত্র দেখালে জেলা প্রশাসক আইনগত দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে তাদেরকে জানান এবং সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এ সময় মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনা রতন চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

ইউপিডিএফ-এর প্রতিবাদ : ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা এক বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলাধীন লেমুছড়িতে সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আইনের প্রতি কোনরূপ তোয়াক্কা না করে কিছু সংখ্যক সেটলার সেনা উপস্থিতিতে গতকাল সুনীল কান্তি চাকমার ৮ একর এবং রূপন তালুকদারের ৩ একর জমিতে ঘর নির্মাণ করলে এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

তিনি আরো বলেন, গত জরুরী অবস্থার সময়ও শত শত একর জমি সেটলাররা সেনাবানিহীর সহায়তায় জবরদখল করেছিল।

তিনি অবিলম্বে ভূমি বেদখল বন্ধ, বেদখলকৃত জমি ফেরতদান, বেদখলকারী সেটলারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মহালছড়ি ভূমি রক্ষা কমিটির বিবৃতি :
মহালছড়ি ভূমি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে শান্তশীল চাকমা ও বিমল চাকমা এক বিবৃতিতে লেমুছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি জবরদখলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যে সময় সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলছে ঠিক সে সময় এভাবে জোরপূর্বক পাহাড়িদের জমি বেদখল এটাই প্রমাণ করে যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যার সমাধান চায় না। এবং এভাবে জোরপূর্বক জমি বেদখল করার মাধ্যমে পাহাড়িদের ভূমিহীন করে সরকার কার্যত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চিরতরে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করতে চায়।

বিবৃতিতে তারা লেমুছড়িতে সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও পাহাড়িদের জমিতে সেটলারদের তোলা অবৈধ ঘরগুলো ভেঙে ফেলা, জরুরী অবস্থার সময় লেমুছড়িসহ মাইসছড়িতে বেদখলকৃত জমি ফিরিয়ে দেয়া, ২০০৬ সালে গামারীঢালায় পাহাড়িদের ১০০ একর জমিতে তোলা সেটলারদের ঘরবাড়ি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ভেঙে দেয়া ও সেখান থেকে সেটলারদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া, ভবিষ্যতে আর ভূমি বেদখল হবে না এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়া, সারনাথ অরণ্য কুটির থেকে সেনা সদস্যদের সরিয়ে নেয়া ও ধর্মাচারণে বিঘ্ন সৃষ্টি বন্ধ করা এবং এলাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানান।

খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল
লেমুছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি বেদখলের প্রতিবাদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজার থেকে বেলা ২:১৫টায় মিছিলটি শুরু হয়ে খাগড়াছড়ি শহরের দিকে যেতে চাইলে নারিকেল বাগান এলাকায় পুলিশ মিছিলটি আটকিয়ে দেয়। পরে সেখান থেকে মিছিলটি আবার স্বনির্ভর বাজারে এসে এ সমাবেশে মিলিত হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা,পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আপ্রুসি মারমা, সহ সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রদেব চাকমা, খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রীনা দেওয়ান ও রাঙামাটি জেলা শাখার আহ্বায়ক যুথিকা চাকমা এতে বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা লেমুছড়িতে সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের জমি জবরদখলের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে মহালছড়ি উপজেলার লেমুছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল বন্ধের দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

উল্লেখ্য যে, গতকাল ৫ ডিসেম্বর২০১০, রবিবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটলার বাঙালিরা মহালছড়ি উপজেলাধীন লেমুছড়িতে সুনীল কান্তি চাকমা, পিতা-মৃত. চন্দ্র কুমার চাকমার ৮ একর এবং রূপন তালুকাদর, পিতা-জ্ঞানলাল তালুদারের ৩ একর জমিতে অবৈধভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে শূরু করে। এদিন সকাল আনুমানিক ৯/১০টা থেকে কিছু সংখ্যক সেটলার বাঙালি গিয়ে এ বেদকল কার্যক্রম চালায়। মহালছড়ি সেনা জোন ও কেঙেলছড়ি সাবজোন থেকে সেনা সদস্যরা উপস্থিত থেকে সেটলারদের সহযোগিতা দেয়। অবেধভাবে ঘর তুলতে যাওয়া সেটলারদের মধ্যে থেকে যে দুজনের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন লেমুছড়ি গ্রামে মো: ওসমান, পিতা: রফাতউল শেখ ও মো: আবদুর রশিদ, পিতা: বশর ভূঁইয়া।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল ও পাহাড়িদের জায়গায় অবৈধভাবে ঘর নির্মাণের পেছনে মহালছড়ি জোন কমান্ডার লে: কর্নেল মামুনুর রশিদের ইন্ধন রয়েছে।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More