শহীদ নবায়ন চাকমা(সৌরভ)-এর স্মরণে দীঘিনালায় ইউপিডিএফ’র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

দীঘিনালা প্রতিনিধি ।। পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নির্ভীক সৈনিক শহীদ নবায়ন চাকমা (সৌরভ)-এর স্মরণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পৃথক তিনটি স্থানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৩০ মার্চ ২০২২) বিকাল ৫.৩০টায় ইউপিডিএফ’র দীঘিনালা ইউনিটের উদ্যোগে শহীদ নবায়ন চাকমা (সৌরভ)-এর স্মরণে কবাখালী ইউনিয়ন, দীঘিনালা ইউনিয়ন এবং বাবুছড়া ইউনিয়নে এই প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে এলাকার পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, ছাত্র-যুবক অংশগ্রহণ করেন।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শুরুর পূর্বে শহীদ নবায়ন চাকমা(সৌরভ) এর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
দীঘিনালা ইউনিয়নে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমা সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সংগঠক সজীব চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য নিকেল চাকমা, সাবেক ইউপি সদস্য টন্টু মনি চাকমা, দীঘিনালা ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রিয় নন্দ চাকমা,সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব স্বপ্না চাকমা প্রমুখ।

ইউপিডিএফ সংগঠক সজীব চাকমা বলেন, শহীদ নবায়ন চাকমা প্রতিবাদী নাম, চেতনার প্রতীক। সেজন্যই রাষ্ট্রীয় বাহিনী নবায়ন চাকমাকে শারীরিক নির্যাতন পর হত্যা করেছে। শহীদ নবায়ন চাকমা জনগণের ন্যায্য অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আপোষহীনভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শাসকগোষ্ঠী নিকট আপোষ করেননি। রাষ্ট্রীয় বাহিনী নবায়ন চাকমাকে হত্যা করলেও পাহাড়িদের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন বন্ধ করতে পারবে না।
পিসিপি নেতা নিকেল চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ নেতা শহীদ নবায়ন চাকমা পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের নির্ভীক সৈনিক ছিলেন। শহীদ নবায়ন চাকমার মতো পিসিপি নেতা রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনী হত্যা করেছিলো। রমেল চাকমার লাশ পর্যন্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, একজন বিপ্লবীকে হত্যা করা যায়, কিন্তু তার আদর্শকে হত্যা করা যায় না। শহীদ নবায়ন চাকমার আদর্শের মধ্যে দিয়ে হাজার ও সংগ্রামী যোদ্ধা পাহাড়ে জন্ম নেবে।

স্বপ্না চাকমা বলেন, চন্দ্র সূর্য যতদিন পৃথিবীতে থাকবে ততদিন জুম্ম জনগণের মুক্তির সনদ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলন সংগ্রাম চলবেই। হত্যা-গুম-অপহরণ-নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে জুম্ম জনগণের ন্যায্য দাবী পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
টন্টু মনি চাকমা বলেন, নবায়ন চাকমা জনগণের বন্ধু। শহীদ নবায়ন চাকমা আদর্শ ধারণ করে শত দমন-পীড়নের মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম জনগণের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
ইউপি সদস্য প্রিয় নন্দ চাকমা বলেন, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ শক্তি হচ্ছে মূল শক্তি। আমাদের জুম্ম জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শাসকশ্রেণীর সকল ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিতে হবে। বক্তারা, নবায়ন চাকমা হত্যাকারী সেনাসদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান এবং পাহাড় থেকে অবৈধ সেনাশাসন তুলে নেয়ার আহ্বান জানান।

অপরদিকে, কবাখালী ইউনিয়নে বিকেল ৫টার সময় অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে ইয়ান চাকমার সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সংগঠক জিৎ চাকমা সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি’র দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি অনন্ত চাকমা।
বক্তারা বলেন, শহীদ নবায়ন চাকমা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই তিনি ইতিহাসে পাতায় অমর হয়ে থাকবেন। যুগে যুগে ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা তাকে স্মরণ করবে।

তারা আরো বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ১১ দফা নির্দেশনার মাধ্যমে এদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। যারা অধিকারের পক্ষে লড়াই সংগ্রাম করছে তাদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর নির্মূল করার জন্য আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত অন্যাযয়ভাবে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণ, জেলগেট থেকে পুনঃরায় গ্রেফতার করা হচ্ছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক কথিত সন্ত্রাসী খোঁজার নামে ঘরবাড়ি তল্লাশি চালিয়ে জনগণকে হয়রানি ও লুটপাট চালানো হচ্ছে। তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়া এবং পাহাড় থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহারের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

অন্যদিকে, বাবুছড়া ইউনিয়নে বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সদস্য নবেল চাকমার সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফ সংগঠক অটল চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, যুব প্রতিনিধি মিন্টু চাকমা, উল্টাছড়ি গ্রামের কার্বারী বীর বাহু চাকমা ও মুরুব্বী দেবময় চাকমা।
বক্তারা বলেন, শহীদ নবায়ন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারহারা জুম্ম জনগণের মাঝে নক্ষত্রের মতো প্রজ্জ্বলিত হবেন। তার নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ জুম্ম জনতা বৃথা যেতে দেবে না।
বক্তারা অভিযোগ বলেন, এদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী গত ১৫ মার্চ ২০২২ গভীর রাতে ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমাকে অন্যায়ভাবে আটক করে যেভাবে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে এর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের আজ ১৫ দিন পার হলেও খুনি সেনা সদস্যদের এখনো সরকার গ্রেফতার করেনি।





সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন