ডেস্ক রিপোর্ট॥ আজ ১৩ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামে রক্তে-লেখা এক স্মরণীয় দিন! ১৯৯২ সালের আজকের এই দিনে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ি গণ পরিষদের আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে সেনা-সেটলারদের যৌথ আক্রমণে মাইনি ব্রিজের সন্নিকটে শহীদ হন ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভরদ্বাজ মুণি চাকমা। তাঁর আত্মবলিদানের আজ ২৬ বছর পূর্ণ হল।
সেদিনের হামলায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন ডজনের অধিক নারী-পুরুষ। যাদের অধিকাংশই ছিলেন বয়স্ক পুরুষ ও নারী, সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন তারাই বেশী।
# ভরদ্বাজ মুণির শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ, দীঘিনালা।[divider style=”normal” top=”20″ bottom=”20″]
যে সময় এই সমাবেশের আয়োজন করা হয় সে সময় দীঘিনালাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের ওপর সেনাবাহিনীর অবর্ণনীয় দমন, পীড়ন ও নির্যাতন সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পরিচয় পত্র ছাড়া স্কুলে যেতে পারত না। একদিকে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন ও অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেটলারদের জোরপূর্বক পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের কারণে তখন গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম দাউ দাউ করে জ্বলছিল। সন্ধ্যা নেমে আসলেই প্রতিটি পাহাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ত। বাড়িতে অন্য গ্রামের অতিথি বেড়াতে আসলে পার্শ্ববতী সেনা ক্যাম্পে নাম-তালিকা দিয়ে আসতে হত। বাজার থেকে সেনাবাহিনীর নির্ধারণ করে দেয়া পরিমাণের বাইরে মালপত্র ক্রয়ে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। প্রতিটি মায়ের বুকে বিরাজ করত এক অজানা আতঙ্ক, কখন সেনাবাহিনী ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। স্থানীয় দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল-সেনা চর আর সেটলারদের দৌরাত্ম্যে জনজীবন হয়ে পড়েছিল দুর্বিসহ। মোট কথা, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিল এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।
এমনি সময়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও পাহাড়ি গণপরিষদ (পিজিপি)-এর ডাকা ছাত্র-গণসমাবেশ মাইনি উপত্যকায় দীর্ঘদিনের নিষ্পেষিত ছাত্র-জনতার চেতনায় বিদ্যুতস্পৃষ্ট করে প্রতিবাদী জোয়ার বইয়ে দেয়। এই সমাবেশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। সেদিন অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষের তেজোদীপ্ত মিছিলে সামিল হয়েছিলেন বানছড়া গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভরদ্বাজ মুণি।
১৩ অক্টোবরের পর আর দীঘিনালা আগের মত থাকেনি। কায়েমী স্বার্থবাদী সেনাচক্র, দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল বেঈমান ও সেটলার সর্দারদের সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ভণ্ডুল হয়ে যায়। গণজোয়ারের মুখে দুর্বৃত্ত দালালরা পিছু হটে। দীঘিনালা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসে।
শহীদ ভরদ্বাজ মুণি’র আত্মবলিদান পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রতিরোধের চেতনায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে!
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।