শহীদ মিটন চাকমা’র স্মরণে সাজেকের মাজলঙে শোকসভা

0

সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

“স্বার্থচিন্তা ও মৃত্যুভয় জয়-করা বীর শহীদ মিটন তোমায় স্যালুট” এই শ্লোগানে ‘RC-এর গদি রক্ষার্থে সন্তু লারমার ভাড়াতে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের পানছড়িতে হামলা, ইউপিডিএফের সংগঠক ও সাবেক ছাত্র নেতা মিটনকে হত্যা ও এলাকায় উৎপাত সৃষ্টির প্রতিবাদে’ সাজেকের মাজলঙে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর ২০২৪) দুপুরে ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিট এই শোকসভার আয়োজন করে।

শোকসভা শুরুর আগে সকাল ৭:৩০টায় শহীদ মিটন চাকমার স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ইউপিডিএফ ও সহযোগি সংগঠনসমূহের নেতা কর্মী, মাজলঙ এলাকার সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধিরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর অধিকার হারা জুম্মো জনগণের জন্য লড়াই করতে গিয়ে সদ্য শহীদ মিটনসহ এযাবতকালে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব চাকমা শহীদ মিটন চাকমার আত্মাবলিদানের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত নেতা-কর্মী, সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণকে আন্দোলনে অবিচল থাকার প্রত্যয়ে শপথ করান।

পরে দুপুর ১২টায় শোকসভা অনুষ্টিত হয়। এতে ইউপিডিএফের মাজলঙ ইউনিটের প্রধান সংগঠক অর্কিড চাকমার সভাপতিত্বে ও রিয়েল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক নিরোধ চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি নিউটন চাকমা, পিসিপি নেতা ভুবান্তর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী সুখী চাকমা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মহেন্দ্র ত্রিপুরা।

ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা বলেন, জেএসএস প্রধান সন্তু লারমা জুম্মো জনগণের জন্য এক চরম অভিশাপে পরিণত হয়েছেন। তিনি জুম্মো জনগণের দাবী পরিত্যাগ করে ‌’৯৭ সাল আপোষ চুক্তি করে জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিলেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে জাতি ধ্বংসের কাজে লিপ্ত রয়েছেন! ’৯৮ সালে প্রদীপ লাল চাকমা, কুসুম প্রিয় চাকমাকে নৃশংসভাবে খুন করা থেকে সর্বশেষ গত ১০ নভেম্বর, ২০২৪ মিটন চাকমাকে তার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যা করেছেন। সন্তু লারমা তার সশস্ত্র বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে এ পর্যন্ত তিন শ’র অধিক জুম্মো জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু-সেবককে হত্যা করেছেন। সেনা-গোয়েন্দরা সন্তু লারমাকে ইউপিডিএফ তথা জুম্মো জাতির অস্তিত্ব ধ্বংসের কাজে লিপ্ত রেখেছে। তিনি এখন প্রতিক্রিয়াশীল, দালাল, স্পাইয়ে পরিনত হয়েছেন।

সচিব চাকমা আরো বলেন, ইউপিডিএফ শুরু থেকেই জেএসএসকে ঐক্য-সমঝোতার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু তারা তা গ্রহণ না করে হত্যালীলায় মেতে উঠেছে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে ইউপিডিএফের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্তু লারমার জাতি ধ্বংসের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শাসকগোষ্ঠি ও তার মদদপুষ্ঠ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া অন্য কোন উপায় নাই। নইলে জাতি অতল গহ্বরে পড়ে যাবে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা পৃথিবীর অধিকারহীন, বঞ্চিত নিপীড়িত জনগণকে নির্মম লড়াইয়ে দ্বিধাহীনভাবেই বীর শহীদ মিটনের মতো আত্মবলিদান দিতে হবে। নূর হোসেন, ডাক্তার মিলন, আবু সাঈদ, মুগ্ধরা যেভাবে জীবন দিয়ে দেশের স্বৈরাচার পতন ঘটিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামেও একইভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে অপশক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয় শত্রুদের রুখে দিতে হবে। জুম্মো জনগণ যখন মরতে শিখেছেন, রক্ত দিতে, প্রাণ দিতে শিখেছেন একদিন অবশ্যই অধিকার, ক্ষমতা অর্জিত হবেই।

নিরোধ চাকমা সন্তু লার্মার ঘৃণ্য কাজের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান। উপস্থিত মুরুব্বী, ছাত্র-যব সমাজকে তার অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সংগ্রামে যোগদানের আহ্বান জানান।

নিউটন চাকমা বলেন, যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার। দাসত্বের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে গন্ডি পেরিয়ে মিটন তথাকথিত সোনার হরিণ চাকরির পেছনে বৃথা সময় নষ্ট না করে জুম্মো জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সামিল হয়েছিলেন। মিটন হওয়া যার তার কাজ নয়। এক মিটনের রক্ত থেকে হাজার মিটন জন্ম নেবে। মিটনের আত্মাবলিদানের সম্মান জানিয়ে ছাত্র-যুব সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে দালাল- প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি অনায়াসে পরাজিত হবে। আর জড়া-জীর্ণ, ভীত-সন্ত্রস্ত জীবন নয়, গর্জে উঠলে কেউই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।

ভবান্তর চাকমা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ পতন ঘটাতে পারলে আমরাও পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজও অবশ্যই সন্তু লার্মার পতন ঘটাতে পারবো। ছাত্র সমাজ কী না করতে পারে। দুনিয়ার কঠিন কাজ ছাত্র সমাজই যে করতে পারে তা প্রমানিত ও পরীক্ষিত। তাই আমাদেরও জুম্মো জনগণের অধিকার অর্জন করতে হলে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। বীর শহীদ মিটন থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

সুখী চাকমা বলেন, জন্মিলে যে মরতে হবে সেটা আমরা সবাই জানি। মিটনের আত্মবলিদান জুম্মো জাতির বীরত্বের প্রমাণ। মিটন মরে নাই, তিনি চিরভাস্বর। জাতির অধিকার, নারীর সম্ভ্রম রক্ষা, পিতৃভূমি রক্ষার্থে মিটন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নারীরা জেগে উঠুন, ঘরের চার দেওয়াল থেকে, রান্না-বান্নার কাজ থেকে বেরিয়ে আসুন, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে সামিল হোন।

মেহেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে জেএসএস-ইউপিডিএফের মধ্যে সংঘাত চলছে। সংঘাত বন্ধের জন্য সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ। সংঘাত বন্ধ না হলে জুম্মো জনগণকে চরম ক্ষতির শিকার হতে হবে। তিনি যে পাটি জাতি ও সমাজের জন্য কাজ করছে সে পাটিকে সহযোগিতা দেয়ার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে শাসকগোষ্ঠির এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সন্তু লারমার ভাড়াটে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দ্বারা হত্যার শিকার হন মিটন চাকমা।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More