খাগড়াছড়ি : সেনা-সৃষ্ট সন্ত্রাসীদের দ্বারা প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন হওয়া ইউপিডিএফ সংগঠক শহীদ মিঠুন চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন “হত্যা করে আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। আগেও যায়নি, এখনো যাবে না।”
গতকাল শুক্রবার (৫ জানুয়ারি ২০১৮) বিকালে বটতলী শ্মশানে মিঠুন চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
বেলা আড়াইটার দিকে শহীদ মিঠুন চাকমার কফিনে ইউপিডিএফ’র পতাকা মুড়িয়ে সম্মান জানানোর পর বিকাল ৩টায় ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীরা মিঠুন চাকমার মরদেহ বহন করে পায়ে হেঁটে বটতলী শ্মশানে নিয়ে যায়। সেখানে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ শত শত ছাত্র-যুব-জনতা ফুল দিয়ে মিঠুন চাকমার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুক্যচিং মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ বান্দরবান জেলা সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা, গবেষক সায়দিয়া গুলরুখ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এমএম পারভেজ লেলিন।
অনুষ্ঠানে সাইদিয়া গুলরুখ বলেন, নিরাপত্তার নামে পাহাড়ে যে শাসন ব্যবস্থা চলছে তার প্রমাণ আজকে সারাদিনে দেখতে পেলাম। সকাল থেকে গাড়ি থামিয়ে শুধুমাত্র পাহাড়ি নাগরিকদের প্রশ্ন করা হয়েছে কেন আসছে, কোথায় থেকে আসছে? এটা তাদের বাড়ি, এটা তাদের জমি, কিন্তু কেন তাদেরকে এসব প্রশ্ন করা হচ্ছে?
তিনি বলেন, যেখানে দিনে দুপুরে মিঠুন চাকমার মত একজন জনগণের নেতা হত্যার শিকার হন, সেখানে নিরাপত্তার নামে কেন সামরিক বাহিনী মোতায়ন রাখা হয়েছে?
তিনি আরো বলেন, আমরা রূপক চাকমার হত্যার বিচার পাইনি। তাকেও একই কায়দায় ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে সামরিক বাহিনী সমর্থিত একটি গোষ্ঠী। তিনি বলেন, একজন প্রকৃত নেতা, সাহসী নেতা, নির্ভীক নেতাকে হত্যা করে তার যে স্বপ্ন, তার যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তাকে হত্যা করা যায় না। মিঠুন চাকমার স্বপ্ন কখনো মৃত্যু হবে না। মিঠুনকে হত্যা করা হলেও তাঁর আন্দোলন থেমে যাবে না।
তিনি বলেন, আজকে যারা লাঠিসোটা নিয়ে লাশ পাহারা দেয়ার চেষ্টা করেছেন, চোখ রাঙানি দিয়েছেন, তাদেরকে বলছি শুনে নিন “হত্যা করে আন্দোলন কখনো বন্ধ করা যায় না। আগেও যায়নি ইতিহাসে কখনো,এখনো যাবে না।”
বক্তব্য দানের পর্ব শেষে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
কফিনে আগুন দেয়ার আগে শহীদ মিঠুনের মরদেহ সামনে রেখে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইউপিডিএফ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা “পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হবো না” মর্মে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি ২০১৮ দুপুরে সেনা-সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে নিজ বাড়ির গেট থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।