শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকায় ৯ ছাত্র সংগঠনের সংহতি সমাবেশ

0

ঢাকা ।। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যর পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলার বিচার, শিক্ষার্থীদের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন সমর্থনের ঢাকায় সংহতি সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)সহ দেশের ক্রিয়াশীল ৯টি ছাত্র সংগঠন।

সমাবেশ থেকে ২২ জানুয়ারি সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি ২০২২) বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন শিক্ষক, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবিরের সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা জুঁতি, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা রিতু, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক ইলিয়াস উদ্দিন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি অনিক রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের তথ্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহবত শোভন প্রমুখ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় যারা সরকারের ভৃত্য গোলামে পরিণত হতে পারে তারাই আজ ভিসি পদের জন্য যোগ্য হয়ে থাকে। যার উদাহরণ আজকের শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটমান পরিস্থিতি এবং তথাকথিত উপাচার্যের শিক্ষার্থীদের প্রতি আচরণ। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন কাউকে নিয়োগ দেন যে বিনা প্রশ্নে সরকার যা করে সেটাকে মেনে নেবে। উল্টো শিক্ষার্থীরা কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না, এমনকি শিক্ষকরাও কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ধরনের উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছেন যারা সরকারের স্বার্থে কাজ করবে তাদের, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি জ্ঞানচর্চা প্রশ্ন উত্থাপনের দিকে যায়, যদি সৃজনশীলতার দিকে যায়, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার দিকে যায় তাহলে সেই জ্ঞান চর্চা করা যাবে না। তখন ক্যাম্পাসে ভয়ের শক্তি তৈরি করতে হবে। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটা করা হয়, আরেকটি করা হয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে। এ দুই শক্তি যাতে অবাধে কাজ করতে পারে, সেটার মূল পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমর্থন দেয় সরকার। সুতরাং সরকার চায় এমন উপাচার্য যে সরকারের কথায় উঠবে এবং বসবে। শুধু তাই না। তার নিজের মধ্যে লোভ থাকবে, মেরুদণ্ডহীন থাকবে। এরকম একটা বোধ শক্তি থাকবে, যে বোধ শক্তি দিয়ে তার নিজস্ব কোনো ব্যক্তিত্ব থাকবে না। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব হবে উপাচার্য।

শাবিপ্রবি আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন সারাদেশের লুটপাট, জুলুমের প্রতিচ্ছবি। শাবিপ্রবি ভিসি নিজেকে জমিদার মনে করেন। তিনি ক্ষমতার ডালে বাদুড়ের মতো উল্টে জড়িয়ে আছেন। ইনি একজন গ্রেনেডিয়ার, গ্রেনেড ভিসি৷ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে তিনি সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়েন। এই উপাচার্যকে সরানো না গেলে সারাদেশে এমন অনেক দুর্বৃত্ত উপাচার্য তৈরি হবে।

সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা জুঁতি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের মৌলিক চাহিদা খাদ্যের জন্য অনশন দেখতে হচ্ছে। আমার বাচ্চাদের পুলিশ দিয়ে বেধড়ক মারা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা রিতু বলেন, শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়। তারা ভালো খাবার পায় না, থাকার জায়গা পায় না। তাহলে কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাঙ্কিংয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে। একজন শিক্ষার্থীকে মেধাশূন্য করার সব ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজানো আছে।

পিসিপি’র নেতা সুনয়ন চাকমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তায় শিক্ষকের প্রয়োজন হয়। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের অভিবাবকও বটেই কিন্তু আমরা দেখি সে শিক্ষককরাই শিক্ষার্থীদের হামলা করে। তারা স্বায়িত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করায়, ছাত্রী শিক্ষার্থীদের সাথে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। সুতরাং শাবিপ্রবির ভিসির মত সে সকল শিক্ষকদের কাছে আমাদের ছাত্ররা কেউ নিরাপদ নয়।

তিনি আরো বলেন, দেশের সকল স্বায়িত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিরা সরকার শাসক দলের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয় এই কারণের তারা তারা সরকারের সকল নির্দেশ পালন করতে বাধ্য, স্বাধীনভাবে কাজ করার মত তাদের ক্ষমতা থাকে না। সেই কারণের শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ভিসি ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হলেও সরকার কোন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে না আর সরকারে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত সে ভিসি জোর দিয়ে বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর বললে তিনি পদত্যাগ করবেন।

তিনি বলেন, শাবিপ্রবির ভিসির তাঁর আত্মমর্যাদা, দায়িত্ববোধ থাকত তাহলে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতেন। দায়িত্ব-নৈতিকতা নেই বলে এখনো পর্যন্ত তিনি নির্লজ্জ্বভাবে সে পদে অসীন থেকেছেন। আমরা দেখেছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামার বিষয়টিকে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে একাত্মতা ও পূর্ণ সংহতি ব্যক্ত করেন এবং সরকার শাসকগোষ্ঠীর সকল ধরনের অন্যায়-অত্যাচার বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে ২২ জানুয়ারি ২০২২ ঢাবির রাজু ভাস্কর্যসহ সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিকী অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More