বিশেষ সম্পাদকীয়
শারদীয় দুর্গা পূজা ও আমাদের শিক্ষণীয় দিক

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচে’ বড় উৎসব দুর্গা পূজার আজ শেষ অর্থাৎ প্রতিমা বিসর্জনের দিন, যা বিজয়া দশমী নামেও অভিহিত। এবার দুর্গা দেবী মর্ত্যে এসেছিলেন ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে, আবার বিদায়ও নেবেন একই বাহনে চড়ে, যা অশুভ ইঙ্গিতবাহী। শাস্ত্রমতে এর ফল হবে ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’ অর্থাৎ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও সংঘাত ঘটতে পারে। বর্তমানে দেশে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে দুর্গা দেবীর ঘোড়ায় চড়ে আগমন এবং প্রস্থান যেন পার্বত্যবাসীকে আগাম সতর্ক বার্তা দিয়ে গেল! আজ প্রতিমা বিসর্জিত হলেও শাস্ত্রের এ সতর্ক বার্তা কে কীভাবে গ্রহণ করতে পেরেছে, সেটাই হলো আসল কথা।
দুর্গা পূজার পেছনের কাহিনী হচ্ছে এই, ব্রহ্মার বরে দৈত্য দানবদের দলপতি মহিষাসুর পুরুষের অবধ্য হয়ে উঠে, অর্থাৎ কোন পুরুষই তাকে হত্যা করতে সক্ষম নয়। ব্রহ্মার বরে বলীয়ান মহিষাসুর স্বর্গরাজ্য থেকে দেবগণকে বিতাড়িত করে এবং এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। দেবগণ দানবদের মূল পাণ্ডা মহিষাসুরকে হত্যা করে স্বর্গরাজ্য ফিরে পেতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর শিবের শরণাপন্ন হয়। মহিষাসুরের তাণ্ডব শুনে তারা এতই ক্রুদ্ধ হন যে অগ্নিশর্মা হয়ে যান। তাদের মুখমণ্ডল ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে তেজ নির্গত হতে থাকে। অনুরূপভাবে দেবরাজ ইন্দ্রসহ অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও তেজ বেরুতে থাকে। সবার সম্মিলিত তেজ একত্রিত ও পুঞ্জিভূত করে তারা এক মহাতেজস্বিনী শক্তিশালী দেবীমূতি তৈরি করেন। দেবগণ প্রত্যেকে নিজের নিজের একেকটি অস্ত্র এ দেবীকে দান করে তাকে অস্ত্রশস্ত্রে বলশালী করে তোলেন। এই দুর্গা দেবীকে দিয়ে পুরুষঅবধ্য মহিষাসুরকে পরাস্ত করে দেবগণ স্বর্গ পুনরুদ্ধার করেছিলেন।
এখানে লক্ষ্যণীয় হলো, সবার সম্মিলিত শক্তি ও তেজ একত্রিত না করলে এবং দেবীকে দিয়ে আঘাত না করলে মহিষাসুরের মত প্রচণ্ড ক্ষমতাশালীকে পরাস্ত করা দেবগণের সম্ভব ছিল না। একক শক্তিতে কোন দেবতার পক্ষে মহিষাসুরকে পরাস্ত করা সম্ভব হতো না। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। যেহেতু মহিষাসুর ছিল পুরুষ দ্বারা অবধ্য, সে কারণে দেবগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়েও তাকে পরাভূত করা যেত না। দেবী অর্থাৎ নারীকে অস্ত্রসজ্জিত করে দেবগণ মহিষাসুরকে পরাস্ত করেছিলেন।
বর্তমান দেশীয় বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যেখানে প্রতি নিয়ত নারীরা লাঞ্ছনা ও পাশবিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছে, বংশপরম্পরার বাস্তুভিটা থেকে পাহাড়ি সংখ্যালঘু জাতিসত্তার জনগণ বিতাড়িত হচ্ছে, এ সময় দেবগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং দুর্গা দেবী কর্তৃক মহিষাসুর বধ ঘটনাটি নির্যাতিত অধিকারহারা জনগণের সম্মুখে শিক্ষণীয় অধ্যায় হিসেবে খোলা রয়েছে।
আজকের দিনের ব্রহ্মা হচ্ছে শাসকগোষ্ঠী এবং নারী নির্যাতনকারী ভূমিদস্যু দুর্বৃত্তরা হলো মহিষাসুর স্বরূপ। ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর যেমন পুরুষ কর্তৃক অবধ্য হয়ে উঠেছিল, তেমনি শাসকগোষ্ঠীর আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদানের কারণে ভূমিদস্যু দুর্বৃত্তরাও আইন আদালতের তোয়াক্কা করছে না। সাধারণ পাহাড়িদের জায়গা-জমি দখল করে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তা থেকে নিস্তার পেতে হলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া জনগণের সামনে অন্য কোন বিকল্প নেই। নির্যাতিত নারীদের এক্ষেত্রে আরও অগ্রণী হতে হবে এবং পুরুষদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের ময়দানে হতে হবে সহযোদ্ধা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে। স্মরণ রাখা দরকার, শাসকগোষ্ঠী জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে লড়াই সংগ্রাম দুর্বল করার নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত। সরকারের টোপ গিলে ধান্দাবাজ চক্র সক্রিয় হয়ে জনগণের লড়াই সংগ্রাম কানাগলিতে নেয়ার জন্য নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, এ থেকে সাবধান হোন এবং তাদের মোকাবিলা করুন!#
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।