শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে পিসিপি’র বিক্ষোভ, স্মারকলিপি পেশ
ঢাকা: সকল জাতিসত্তার স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বন্ধ ‘পাহাড়ি ছাত্রাবাস’ চালুর দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং শিক্ষামন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।
বৃহস্পতিবার (১৮ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য সম্মুখে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি সিমন চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাইকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশেনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি থুইক্যসিং মারমা। এতে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ ও ছাত্র গণমঞ্চের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল বিশ্বাস। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রায় অর্ধ শত জাতিসত্তা রয়েছে। এসব জাতিসত্তার স্বতন্ত্র ভাষা-সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু এসব ভাষা-সংস্কৃতি চরমভাবে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের কোন প্রচেষ্টা নেই। বরং কিভাবে এসব ভাষা সংস্কৃতি বিনষ্ট করা যায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সে প্রক্রিয়া জারি রয়েছে।
সিমন চাকমা বলেন, পিসিপি ২০০০ সাল থেকে মাতৃভাষা শিক্ষা লাভসহ ৫দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যলয় থেকে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ যাবৎ কোন সরকার সেই দাবি পূরণ করেনি। আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা পাঠদান ২০১৪ সাল থেকে চালু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ অবধি তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
মাইকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তার ইতিহাস বই পুস্তকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিকৃত করা হচ্ছে। এটা পাহাড়িদের ইতিহাস হত্যা হিসেবে তিনি অভিহিত করেন। পাহাড়ে সেনাবাহিনী পাক হানাদার বাহিনীর ভূমিকা নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনারা যেভাবে এদেশে ভাষা সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞা করেছে, তেমনি পাহাড়ে নিয়োজিত সেনা “মেজর আতিক বাহিনী” কর্মকর্তা আতিক বাহিনী ভাষার মাসে জাতিসত্তার ভাষার বর্ণমালার প্লাকার্ড ছিড়ে দিয়ে চরমভাবে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, সংবিধানে জাতিসত্তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে আওয়ামী সরকারের জাতিবিদ্বেষ চরমভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় পাঠদানসহ পিসিপির শিক্ষাসংক্রান্ত ৫দফা বাস্তবায়ন, পাহাড়ে সরকারি স্কুল কলেজে পাহাড়ি ছাত্রাবাস চালু, সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা” বাতিলের দাবি জানান।
সমাবেশের পর বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর ঘুরে শিক্ষা মন্ত্রানালয় অভিমুখে স্মারকলিপি দিতে গেলে শিক্ষা অধিকার চত্বরে পুলিশী বাধার মুখে পড়ে। এরপর পিসিপি’র সভাপতি সিমন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমার নেতৃত্বে ৮সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষামন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিলিপি পেশ করে। শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় তার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে শিক্ষা অধিকার চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়।
উল্লেখ্য, পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫দফা দাবি হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা; স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে জাতিসত্তার প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য বাদ দেয়া; পাহাড়ি জাতিসত্তার বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনী এবং সঠিক সংগ্রামী ইতিহাস স্কুল- কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা; বাংলাদেশে সকল জাতিসত্তার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক রচনা জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা এবং পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়িদের জন্য বিশেষ কোটা চালু করা।
——————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।