সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে পিসিপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার জন্য ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর শাখা।
আজ বৃহস্পিতবার (১১ জুলাই ২০২৪) বিকাল ৫ টায় চট্টগ্রাম নগর ষোলশহর রেল স্টেশনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রোনাল চাকমার সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য জেসি চাকমা।
সমাবেশে সোহেল চাকমা বলেন, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের আগ পর্যন্ত দেশে সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল। দেশে সকল জাতি সমানভাবে বিকাশ লাভের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনগ্রসর সংখ্যালঘুদের জন্য আরও দীর্ঘ সময় ধরে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখার প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা গুনগত মানের নয়। জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ঘুষের মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়ে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের যেভাবে বিকাশ হওয়ার কথা তারা সেভাবে পারে না। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নেই। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষক এবং অবকাঠামো পর্যাপ্ত নেই। ফলে ঝরে পড়ার শিক্ষার্থী দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০১৮ সালের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়েছিলেন এবং সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ কোটা বাতিল কিংবা সংস্কার কোনটাই চাননি। কিন্তু সরকার অন্য কারোর মতামত না নিয়ে দেশের পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে দেয়, যা মোটেই সুবিবেচনাপ্রসূত ও বাস্তবসম্মত ছিল না।
সমাবেশে রোনাল চাকমা বলেন, সরকার কোটা বাতিল করে পাহাড়-সমতলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর এগিয়ে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মেডিকেলসহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাহাড়ি কোটায় বাঙালি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদের সচিব শফিউল আলমের বক্তব্য সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেছিলেন, “পাহাড়িরা অনেক অগ্রসর হয়ে গেছে, তাঁদের জন্য কোটার প্রয়োজন নেই।” কোন মানদন্ড কিংবা গবেষণা অথবা জরিপের ভিত্তিতে সেটা করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য অবিবেচনাপ্রসূত, অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত।
তিনি বলেন, পাহাড়ে তথাকথিত উন্নয়নের নাম দিয়ে যা হচ্ছে সেটা যদি শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে হত তাহলে ভালো হত। কিন্তু সেখানে যত পযর্টন স্থাপনা হয়েছে, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তত স্কুল-কলেজ, হসপিটাল হয়নি।
সমাবেশ থেকে তিনি, কোটা যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
সমাবেশ থেকে বক্তারা, অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের ৫ শতাংশ কোটা সহ অনগ্রসর জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ও সু-বঞ্চিত শ্রেণীদের কোটা পুনর্বহাল ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়ি কোটা চালু করার তাবি জানান। এছাড়াও বিশেষজ্ঞ ও যোগ্যতম ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে কোটা যৌক্তিক সংস্কার কর এবং সারাদেশের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।