।। জনি ত্রিপুরা, সাথোয়াই মারমা, মনীষা চাকমা।।
গত ২৬ আগষ্ট সাংসদ উষাতন তালুকদার বরগুনার তালতলীতে রাখাইনদের শ্মশান ও ভূমি দখলের বিষয়টি দেখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর ২৭ আগষ্ট তিনি কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালায় ক্ষতিগ্রস্থ রাখাইনদের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। প্রথম আলো তার এই ঘটনাস্থল পরিদর্শনের ছবি ছাপে এবং বক্তব্য প্রচার করে। [২৭ ও ২৮ আগষ্ট।]
আমরা তার এই ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করি। তার উচিত একইভাবে দীঘিনালায় বিজিবি ৫১ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের মানবেতর জীবন যাপনের চিত্র দেখতে যাওয়া। রাঙামাটি শহরের অনতিদূরে বগাছড়িতে সেটলার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও তিনি পরিদর্শন করতে পারেন। আমরা মনে করি বাংলাদেশের শোষিত নির্যাতিত ও অধিকারহারা জনগণ এবং বিশেষত সংখ্যালঘু জাতিগুলোর উপর যে নির্মম শোষণ নিপীড়ন চলছে তার চিত্র তুলে ধরতে ও তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উষাতন বাবুর আরও বেশী সক্রিয় ও তৎপর হওয়া উচিত। আরও বেশী সাহসী ভূমিকা রাখা উচিত। তার কাছেই জনগণের প্রত্যাশা বেশী, কারণ সংখ্যালঘু জাতির এমপিদের মধ্যে একমাত্র তিনিই নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের পক্ষে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রাখেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত অপর দুই সাংসদ হলেন সরকারী দলের আজ্ঞাবাহী দাস। তারা প্রথমত আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলার সাথে বাঁধা। দ্বিতীয়ত নিজ অধিকারহারা জাতির জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর সে সংগ্রামী রাজনীতি তারা কোনদিন কোন সময় তার ধারে কাছে ছিলেন না। শুধু ছিলেন না বললে ভুল হবে, তারা সে ধরনের প্রগতিশীল রাজনীতি থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে ছিলেন এবং এখনো আছেন। তাই তাদের কাছ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণসহ সংখ্যালঘু জাতিগুলোর খুব বেশী প্রত্যাশা নেই।
কিন্তু উষাতন তালুকদারের ব্যাপারটি পুরোপুরি আলাদা। তিনি জনসংহতি সমিতির একাংশের সাথে যুক্ত হলেও নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি তার সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তিনি অধূনা – বিলুপ্ত শান্তিবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার (এফসি) ছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামের প্রথমদিকে তখনকার সাপ্তাহিক বিচিত্রায় শান্তিবাহিনীর একজন কমান্ডার হিসেবে সালিম সামাদকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি যথেষ্ট আলোচিত হয়েছিলেন।
উষাতন তালুকদার ভদ্র নম্র চরিত্রের মানুষ হিসেবে পরিচিত। অনেকে মনে করেন তিনি তার এই ইমেজ ব্যবহার করে চলমান ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে জুুম্ম জাতির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হতে পারেন। এই ভূমিকায় তিনি দুই জেএসএস ও এমনকি ইউপিডিএফের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবেন, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
তার কিছু আচরণ ও বক্তব্যর ব্যাপারে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে, সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু জুম্ম জাতির প্রতি তার যে ভালোবাসা , তার সে দেশপ্রেম সে ব্যাপারে কারোর প্রশ্ন থাকতে পারে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক নেতারা সাধারণত কেউ সমালোচনার উর্ধ্বে নন। তিনিই-বা তার ব্যাতক্রম হবেন কেন? তবে তার কাছ থেকে যুক্তিসঙ্গতভাবে যা প্রত্যাশা করা যায় তা হলো- তিনি সংকীর্ণ দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবার নেতা হবেন, সমগ্র জুম্ম জাতির নেতা হবেন এবং জুম্ম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহসী ভূমিকা নেবেন। আমরা আশা করি তিনি এই ভূমিকা নিলে তার পেছনে তার দলের সবার সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তাদেরকে অবশ্যই সংকীর্ণতা ও ক্ষুদ্র স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে হবে।
১৯৭০ দশকে প্রয়াত মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বে যেভাবে পুরো জুম্ম জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, বর্তমানে উষাতন তালুকদারকে সামনে রেখে নতুন করে সেভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ বার বার আসে না। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিত হবে না। আমরা ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ ও জুম্ম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে উষাতন তালুকদারের বলিষ্ট পদক্ষেপ আশা করছি। আমরা চাই তিনি Divisive figure হবেন না, হবেন symbol of unity বা ঐক্যের প্রতীক। আশাকরি তিনি জুম্ম জাতিকে নিরাশ করবেন না। #
[জনি ত্রিপুরা, সাথোয়াই মারমা ও মনীষা চাকমার অনুরোধে তাদের এই লেখাটি ছাপানো হলো — সম্পাদক, সিএইচটি নিউজ ডটকম]
————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।