মুক্তমত

সাজেককে রক্ষা করতেই হবে

0
360

প্রতীশ্বর চাকমা

২০১০ সালের ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি সাজেকে পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সাজেকের নারীরা। ফাইল ছবি

সাজেক একটি প্রতিবাদের নাম। এই সাজেকই উজো উজো ধ্বনিতে গর্জে উঠেছিল সেনা-সেটলারদের ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে।

সাজেকের বুকে লেগে রয়েছে লক্ষ্মী বিজয়, বুদ্ধপুদি, লাদুমণিদের রক্ত।

সাজেকে বসবসারত মানুষেরা পোড় খাওয়া। কাপ্তাই বাঁধের ফলে জমি-জমা হারানো, বিভিন্ন স্থানে সেনা-সেটলার হামলার পর উচ্ছেদ হওয়া মানুষেরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে সাজেকে বসতি গড়ে তুলেছে। এই মানুষগুলোর ঘাম-রক্তে একাকার হয়ে আছে সাজেকের মাটি, সাজেকের পাহাড়-প্রকৃতি।

এই নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের আবাসভূমি সাজককে লুটে নিতে শাসকগোষ্ঠী আজ মরিয়া। তাই সেখানে মানুষকে উচ্ছেদ করে বানানো হয়েছে পর্যটন। বানানো হচ্ছে মসজিদ। সেনা ক্যাম্প, বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন-সম্প্রসারণের নামে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে জায়গা-জমি।

পোাড়াভিটায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সাজেকের ঘরপোড়া লোকজন। ছবিটি ২০১০ সালে ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি সাম্প্রদায়িক হামলার পরর্বতী সময়ে তোলা। ফাইল ছবি

বাঙালি সেটলার পুনর্বাসন করার জন্য সাজেকের উপর বার বার আঘাত করা হয়েছিল। দুই দুইবার (২০০৮ ও ২০১০ সালে) পুড়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছিল সাজেকের মাটি, পাহাড়িদের শত শত ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তবুও সাজেকের মানুষ দমে যায়নি। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল রক্ত দিয়ে। সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল বুদ্ধপুদি ও লক্ষ্মী বিজয় চাকমাকে। সেটলারদের হাতে খুন হয়েছিলেন লাদুমনি চাকমা। কিন্তু প্রতিরোধ থেমে যায়নি। যার ফলে সেনা-সেটলাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

খুন, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ার পরও যখন প্রতিবাদী মানুষকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি তখনই শাসকগোষ্ঠী তথা সেনাবাহিনী বেছে নেয় অন্য পন্থা। গড়ে তোলা হয় পর্যটন কেন্দ্র। বাইরে থেকে শত শত পর্যটকের আসা-যাওয়ার কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সাজেক। এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে চির নিপীড়িত পাহাড়ি জনগণকে।

মসজিদ নির্মাণের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানিয়ে সাজেক এলাকাবাসীর মানববন্ধন

শুধু তাই নয়, এখন এই পর্যটন কেন্দ্রেই গড়ে তোলা হচ্ছে একটি বিশালকার মসজিদ। যার অন্যতম উদ্দেশ্য হতে পারে আরো সেটলার বাঙালি পুনর্বাসন। না হলে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় কেন মসজিদ স্থাপন করা হবে? কিছুদিন আগে প্রকাশ হয়েছিল সাজেক ইউনিয়নের বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের গোপন পরিকল্পনার তথ্য। ফলে সাজেকে বসবাসরত পাহাড় আঁকড়ে থাকা চিরদুখী মানুষকে আবারো দুচিন্তায় ফেলেছে।

পাহাড়িদের রক্ত, ঘামে ভেজা এই সাজেককে আমাদের রক্ষা করতেই হবে। মনে রাখতে হবে সাজেক রক্ষা না হলে পাহাড় রক্ষা হবে না। তাই সাজেককে রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যতই বাধা-বিপত্তি আসুক তা মোকাবিলা করতে হবে। এছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

* লেখক একজন সচেতন ছাত্র

[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.