সাজেকের কমলাকে ৬ পাহাড়ি পরিবারের জুমের জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ক্যাম্প

0
396
ক্যাম্প নির্মাণের জন্য মাটি কাটার কাজ চলছে

সাজেক প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের বড় কমলাক এলাকায় ৬ পাহাড়ি পরিবারের জুম চাষের জায়গা জোরপূর্বক দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি’র (ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) একটি নতুন ক্যাম্প। এতে উক্ত ৬ পরিবারের জুমচাষের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

যাদের জুমের জায়গায় ক্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে তারা হলেন- ১.বৃষ চাকমা (৪০), পিতা-বীরসেন চকমা, ২.ডালিম কুমার চাকমা (৩৩), পিতা-প্রতি রঞ্জন চাকমা, ৩.নীল কুমার চাকমা (৫৫), পিতা-ধর্মধন চাকমা, ৪.লক্ষী কুমার চাকমা (৩৭), পিতা-কালাচোগা চাকমা, ৫.রাজ্যমনি চাকমা (৩৩), পিতা-বরুণ কুমার চাকমা ও ৬.শুক্র চাকমা (৩৫);পিতা-ললিত মোহন চাকমা।

জানা যায়, এ বছরের জুম চাষের জন্য উক্ত ৬ পরিবার বড় কমলাক এলাকায় পাহাড়ে জঙ্গল কেটে জায়গা প্রস্তুত করেন এবং সেখানে জুমঘর নির্মাণ করে ফসল বোনার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু হঠাৎ ইসিবি’র সদস্যরা তাদেরকে সেখানে জুম চাষ করতে বাধা দিতে থাকে। গত ২৪ এপ্রিল ২০২১ ইসিবি’র সদস্যরা ক্যাম্প নির্মাণের জন্য জুমচাষীদের জুমচাষের জন্য প্রস্তুতকৃত জমিতে মাটিকাটার কাজ শুরু করে। এতে জুমচাষীরা আপত্তি ও প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু জুমচাষীদের আপত্তি সত্ত্বেও ২৮ এপ্রিল ইসিবি’র সদস্যরা পূনরায় জোরপূর্বকভাবে মাটিকাটার কাজ শুরু করলে জুমচাষীরা আবারো আপত্তি জানায়। কিন্তু তাদের আপত্তি ও প্রতিবাদ কোন আমলে নেওয়া হচ্ছে না। উপরন্তু উক্ত ৬ পরিবারকে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হচ্ছে।

জুমের জমিতে ক্যাম্প নির্মাণৈর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন জুমচাষীরা

এরই প্রতিবাদে গত ২৮ এপ্রিল উক্ত জুমচাষীরাসহ স্থানীয় এলাকার জনগণ সেখানে একটি মানববন্ধন করেছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এখানকার পাহাড়ি জনগণের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে জুম চাষ। এখন থেকে আগামী ছয় মাস জুম চাষের জন্য উপযুক্ত মৌসুম। কিন্তু আগেভাগে কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই আমাদেরকে জুম চাষে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এখন যদি আমরা জুম চাষ করতে না পারি তাহলে আমাদেরকে অনাহারে মরতে হবে।

জানা গেছে, উক্ত স্থানে (জুম চাষের জন্য প্রস্তুতকৃত জায়গায়) বর্তমানে বুলডোজার দিয়ে মাটিকাটার কাজ চলছে এবং ইসিবি’র একটি দল সেখানে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করছে। ফলে উক্ত ৬ পরিবার জুমচাষের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। কারণ জুমচাষ করতে হলে অনেক আগে থেকে জঙ্গল কেটে শুকিয়ে আগুনে পুড়ে ফেলতে হয়। তারপর পুড়ে যাওয়া গাছ-গাছালি পরিষ্কার করে বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধানসহ অন্যান্য ফসল বুনতে হয়। এখন যদি তারা সেখানে জুম চাষ করতে না পারে তাহলে এ বছর আর তাদের জুম চাষ করা সম্ভব হবে না।

অপরদিকে, সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কারণে পাহাড়িদের ফলজ-বনজ বাগান ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ৬০ পরিবার চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.