সাজেক(বাঘাইছড়ি) প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের গঙ্গারাম দোর এলাকায় গত ১ ডিসেম্বর ২০১০ সকাল ১১টায় এক যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত যুব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি রেমিন চাকমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মিঠুন চাকমা, বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার আহ্বায়ক চিক্কধন চাকমা, দিঘীনালা উপজেলা শাখার সভাপতি দীপন জ্যোতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা সুব্রত ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর পক্ষ থেকে রীনা চাকমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জ্ঞানেন্দু চাকমা ও সাজেক নারী সমাজের আহ্বায়ক অম্পিকা চাকমা। সমাবেশে দেড় হাজারের মতো লোক অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ি জনগণকে চিরতরে উচ্ছেদ করে দেয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে গত ১৯-২০ ফেব্রুয়ারী সাজেকে সেনা-সেটলাররা হামলা চালিয়ে দুই জনকে খুন সহ চার শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর আগেও ২০০৮ সালে এ এলাকায় পাহাড়িদের গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি রক্ষা সহ অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে যুব সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার-সেনাবাহিনী সাজেক এলাকা থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করতে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো হুমকি-ভয় দেখিয়ে পাহাড়িদের বিতাড়িত করার চেষ্টা চলছে। সরকারের এ সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বক্তারা সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি এবং জনগণ এ চুক্তির কোন সুফল ভোগ করতে পারেনি। সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির মুলা ঝুলিয়ে সন্তু লারমাকে দিয়ে পাহাড়ি জনগণের প্রকৃত মুক্তির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে। সন্তু লারমা সরকারের ক্রীড়নক হয়ে জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংসের সরকারী নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে। বক্তারা পার্বত্য চট্টগামের জনগণের প্রকৃত মুক্তির লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে ১৯-২০ ফেব্রুয়ারী সাজেকে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা ও খুনের সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান, অপারেশন উত্তরণ বন্ধসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার ও সেটলারদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন, কল্পনা চাকমা অপহরণের সঠিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে এক কাউন্সিলের মাধ্যমে সকলের সম্মতিক্রমে বিনয় চাকমাকে সভাপতি, উদয়ন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং রিপন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়।