মতামত
সাজেকে রুইলুই পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য কী?
বিশেষ প্রতিনিধি ।। রাঙামাটি জেলার সাজেকের রুইলুই পাহাড়ের চূড়ায় বর্তমানে একটি মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে। এ নির্মাণ কাজে পানি ও বালি সরবরাহের জন্য পাহাড়িদের বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক বছর আগে রুইলুই পাহাড়কে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এর পুর্ব দিকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে ভারতের মিজোরাম সীমান্ত। তবে পাহাড় থেকে দেখতে কাছে হলেও পাহাড়ি এলাকা বিধায় সেখানে যেতে অনেক সময় লাগে এবং সহজে যাওয়া যায় না।
রুইলুই পর্যটন কেন্দ্র হলেও এটি একটি সম্পূর্ণ জুম্ম অধ্যুষিত এলাকা। এখানে বিশেষত পাংখো ও চাকমাদের বসবাস। কোন বাঙালি বসতি এখানে নেই। বাঙালিরা সেখানে যান বেড়াতে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে, ধর্মকর্ম কিংবা নামাজ আদায় করতে নয়। তাই সেখানে মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন জাগা অত্যন্ত স্বাভাবিক। যদি কোন মুসলিম পর্যটক নামাজ পড়তে চান, তাহলে তা তিনি হোটেলের মধ্যে অনায়াসে সেরে নিতে পারেন। তাই সেখানে মসজিদ নির্মাণ সম্পূ্র্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয়।
মুলত রুইলুই থেকে ধীরে ধীরে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যটনের উদ্দেশ্যও তাই। মসজিদের পর আসবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন ব্যবসা ও স্থাপনা, তার সাথে ঘটবে বহিরাগতদের আগমন ও বসতি। এ সব স্থাপনা নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হবে জমির। সেই জমি দখলের জন্য উচ্ছেদ করা হবে পাহাড়িদের। এভাবে ধীরে ধীরে বহিরাগতদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে এবং পাহাড়িরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এখনো পযন্ত পর্যটনের কারণে শত শত পাহাড়ি পরিবার উচ্ছেদসহ নানাভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়েও একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের জন্য ম্রো জাতির লোকজনকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এর আগে তারা একদফা উচ্ছেদের শিকার হয়েছিলেন, তাও একটি পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের কারণে। তাই বলা হয় পযটন পাহাড়িদের জন্য অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ প্রসঙ্গে ঈশপের বিখ্যাত সেই ‘দুষ্টু বালক ও ব্যাঙদের’ গল্পের কথা মনে পড়ছে। এই গল্পে একটি পুকুরে কিছু ব্যাঙ বাস করতো। একদিন কিছু দুষ্টু বালক খেলার ছলে সেই পুকুরে ব্যাঙগুলোর দিকে ঢিল ছুঁড়ছিল এবং হেসে মজা করছিল। তাদের সেই খেলায় তারা আনন্দ পেলেও কিছু ব্যাঙ মারা যায়, কিছু ব্যাঙ আহত হয়। ব্যাঙগুলো এতে ভীষণ অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাঙ সর্দার সাহস করে পানি থেকে উঠে এসে দুষ্টু বালকদের উদ্দেশ্যে বলে: তোমাদের যা খেলা, আমাদের জন্য তাই মৃত্যু। তাই এখুনি তোমরা তোমাদের খেলা বন্ধ করো।
আমাদেরও হঠাৎ গজে ওঠা বাংলাদেশের নব্য ধনিকদের উদ্দেশ্যে বলতে ইচ্ছে হয়: তোমাদের বিনোদনের জন্য যা পর্যটন, তা আমাদের জন্য দুঃসহ মরণ। তাই তোমরা পর্যটনের নামে এসব বন্ধ করো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসতে তো তোমাদের জন্য বাধা নেই। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সাথে মসজিদের কী সম্পর্ক থাকতে পারে? তোমাদের বিনোদনের জন্য অন্যকে উচ্ছেদ হতে হবে কেন? অন্যের সংস্কৃতি বিনষ্ট, কলুষিত করতে হবে কেন?