সিন্দুকছড়িতে সোহেল ত্রিপুরার জায়গা দখল করে সেনাবাহিনীর যাত্রী ছাউনী নির্মাণ!

নিজস্ব প্রতিরিধি।। খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের ২২৬ নং সিন্দুকছড়ি মৌজার মনাজয় কার্বারি পাড়ার বাসিন্দা সোহেল ত্রিপুরা (আসল নাম স্বরচানঞ্জয় ত্রিপুরা, পিতা-মৃত ভগেন্দ্র ত্রিপুরা)-এর ভোগদখলীয় জায়গা (জায়গাটি সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি সড়কের পাশে অবস্থিত) দখল করে সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। যেটিকে ‘শান্তি নিবাস যাত্রী ছাউনী’ নাম দিয়ে তারা একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছে।
উক্ত সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে “বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি রাস্তার যাত্রীদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত ‘শান্তি নিবাস যাত্রী ছাউনী’, বাস্তবায়নে সিন্দুকছড়ি জোন, গুইমারা রিজিয়ন”।
যাত্রী ছাউনী নাম দেওয়া হলেও সেটি সেনা চৌকি হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। ইতোপূর্বে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ নাম দিয়ে সনে রঞ্জন ত্রিপুরার জায়গাটি দখল করা হলেও বর্তমানে সেটি সেনা চৌকি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সেখানে কোন চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই সোহেল ত্রিপুরাকে সিন্দুকছড়ি জোানে ডেকে হুমকি দিয়ে তার নির্মিত বাড়িটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ১৭ জুলাই বিকালে সোহেল ত্রিপুরা তার বাড়িটি ভেঙে ফেলেন। এর ১ মাস পর গত ১৭ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনী উক্ত স্থানে বাঁশ ও শন দিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করে। যেটি এখন তারা যাত্রী ছাউনীতে পরিণত করেছে।
এদিকে, জায়গাটির ভোগদখলীয় মালিক সোহেল ত্রিপুরা উক্ত জায়গা বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি লিখিত আবেদনপত্র পেশ করেছেন।

গতকাল ২৩ আগস্ট ২০২১ পেশকৃত আবেদন পত্রে তিনি বলেন, “আমি একজন নিরীহ ভূমিহীন জুমিয়া প্রজা। আমার নামীয় কোন প্রকার জমিজমা নেই। অনেক কাকুতি মিনতি করিয়া মৌজা প্রধানের সহানুভূতিতে এবং তাহার কর্তৃক অনুমোদিত আমার ভোগদখলে আনুমানিক ৫.০০ (পাঁচ) একর ৩য় শ্রেণী ফলজ ও বনজ গাছ সম্বলিত বাগান সৃজিত অবস্থায় বিদ্যমান আছে। সৃজিত বাগান পরিচর্যা ও তত্ত্বাবধানের লক্ষ্যে আমি আমার জায়গার চৌহদ্দির মধ্যে খামার বাড়ি নির্মাণ করিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিন্দুকছড়ি জোনি কর্তৃক উক্ত নির্মিত খামার বাড়িটি ভেঙে নেওয়া কিংবা উচ্ছেদের হুমকি প্রদান করায় আমি খামার বাড়িটি ভেঙে নিই। পরবর্তীতে জায়গা/বাস্তুভিটা পরিবর্তন করে অন্যত্র খামার বাড়ি নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করিলে তাদের নির্দেশ মোতাবেক খামার বাড়ি পুনঃরায় নির্মাণ করি। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হতে না হতেই সেটিও ভেঙে নিতে/উচ্ছেদের পুনরাবৃত্তি হুমকি প্রদান করা হয়। ফলে আমার মতো নিরীহ অসহায় জুমিয়া প্রজা হিসেবে নিরূপায় হইয়া মহোদয়ের শরণাপন্ন হলাম”।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীকে উপলক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকার যেখানে ভূমিহীন ও অসহায়দের জায়গা-জমি বরাদ্দ ও ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন, সেখানে সোহেল ত্রিপুরার মতো একজন অসহায় জুমচাষীর জায়গা বেদখল ও তাকে ঘর নির্মাণে কেন বাধা দেয়া হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না”। তারা এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।