সেনাবাহিনীর মধ্যযুগীয় বর্বরতার বলি ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমা মিলন

নিজস্ব প্রতিনিধি।। সেনাবাহিনী যে কত নিষ্ঠুর, কত অমানবিক তা ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমা ওরফে মিলন (৪৭)-এর উপর নির্যাতনের চিত্র দেখলেই গা শিউরে উঠে। তাকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছে যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও নির্যাতনের ফলে তার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া—দুটো ছবি আমাদের হাতে এসেছে।
এর একটি ছবিতে দেখা যায় দু’জন সেনা সদস্য মিলনের গলার পিছন দিকে তার পরিহিত টিশার্টের ওপর অক্টোপাসের মতো ধরে রয়েছে। আর মাটির উপর বসিয়ে রাখা হয়েছে মিলনকে, তার ওপর যে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে তার শারীরের বিধ্বস্ত অবস্থাই তা বলে দেয়। আর এই ছবিতে একজন সেনা সদস্যকে হাসিমুখো অবস্থায়, আরেকজনের চেহারা দেখা যায় না শুধু মিলনের টিশার্টে ধরা হাতটি দেখা যায়। সেনা সদস্যদের এভাবে মিলনকে ধরে রাখার দৃশ্য দেখে মনে হয় তারা যেন মহাখুশি!
অপর ছবিতে দেখা যায়া মিলনের নিথর দেহ পড়ে আছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। দেখেই বুঝা যায় তাকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন চালিয়েই হত্যা করা হয়েছে।
নবায়ন চাকমা মিলন দীঘিনালা উপজেলার ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের বাগানপাড়া এলাকার মনিভদ্র পাড়ায় একজনের বাড়িতে অবস্থানকালে গত ১৫ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৩টার সময় দীঘিনালা সেনা জোনের একদল সেনা সদস্য তার অবস্থান করা বাড়িটি ঘেরাও করে এবং তাকে আটক করে। আটকের পর পরই সেনারা তার ওপর হামলে পড়ে। চালায় মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। ইচ্ছেমত নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে সেনারা মুমুর্ষ অবস্থায় সেখান থেকে তাকে ক্যাম্পের দিকে নিয়ে আসে এবং দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দীঘিনালা উপজেলা কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎক ডা. সানজিদা জানান, মিলন চাকমাকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তার আগে তাঁর মৃত্যু হয়। কী করণে মৃত্যু হতে পারে সেটি ময়না তদন্তের আগে নিশ্চিত বলা যাবে না। (সূত্র: সিএইচটি টুডে ডট কম)।
এদিকে সেনা হেফাজতে নির্যাতন চালিয়ে নবায়ন চাকমা মিলনকে হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো গতকাল খাগড়াছড়ি সদর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনা সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
রাজনীতি সচেতন মহল পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান নিপীড়নমূলক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন, বিচার বহির্ভুত হত্যা, গ্রেফতার– এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা চুক্তিপূর্ব অবস্থার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এতে করে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই সরকারের উচিত দমন-পীড়নের পথ পরিহার করে অচিরেই স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া।
উল্লেখ্য, এর আগে বিগত ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট দীঘিনালায় সেনাবাহিনী কর্তৃক আটকের পর কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজিয়ে নবীন জ্যোতি চাকমা, ভুজেন্দ্র চাকমা ও রুচিল চাকমা নামে তিনজনকে বিচার বহির্ভুতভাবে গুলি করে হত্যা করেছিল।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন