সেনা নির্যাতনে ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি’র বিক্ষোভ

ঢাকা ।। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক প্রতিনিয়ত রাত-বিরাতে বিচার বহির্ভুত হত্যা, খুন, গুম, অপহরণের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা পাহাড়ে জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনকারী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দমনের উদ্দেশ্য করা হচ্ছে। এসব রাজনৈতিক এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ ২০২২) বিকাল সাড়ে ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ইউপিডিএফ-এর নেতা নবায়ন চাকমা (মিলন)-কে সেনাবাহিনীর দিঘীনালা সদর জোনের একটি দল কর্তৃক আটকের পর অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার প্রতিবাদে ও এ ঘটনার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এই আহ্বান জানান।
সমাবেশে অমল ত্রিপুরা বলেন, সেনা হেফাজতে আটকের পর নির্যাতন করে নবায়ন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন কিছু নয়। পাহাড়ে এই ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ২০১৭ সালে রাঙামাটির নান্যাচরে পিসিপি নেতা রমেল চাকমাকে সেনা হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ সামাজিক-ধর্মীয় রীতি-নীতিকে উপেক্ষা করে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ২০১৮ সালে মিঠুন, অনাদি, অনল চাকমা ও কাঠাং ত্রিপুরাসহ আরো অনেক নেতা-কর্মী, সাধারণ জনগণকে হত্যা এবং ২০১৯ সালে একই উপজেলায় (দীঘিনালায়) বড়াদাম এলাকায় কথিত বন্দুক যুদ্ধের নাম করে বুজেন্দ্র্র্র, রসিল ও নবীন চাকমাকে বিনা বিচারে হত্যা করেছিল সেনাবাহিনী। এছাড়াও সাজেক, নান্যানচর, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যাকন্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনাগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার না হওয়াতে সেনারা আজকে নবায়ন চাকমাকে নির্যাতন করে হত্যা করার দুঃসাহস পেয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের আইনানুসারে কোন নাগরিক অপরাধ করলে আইনের আওতায় এনে আদালতে বিচার করা হয়। আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু নবায়ন, রমেল চাকমাদের বিনা বিচারে নির্যাতন করে হত্যাকান্ডের ভার কিভাবে পেলো পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনারা? এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন নয় কি? যারা রক্ষক, তারা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে পাহাড়ি জনগণ কার কাছে নিরাপত্তা পাবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণবিরোধী ‘ ১১ দফা ’ নির্দেশনার জারি করার মাধ্যমে সেনা শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। যার ফলে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের অপারেশন উত্তরণের নাম ব্যবহার করে ইচ্ছেমতো পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন, রাতের আধারে বিনা অনুমতিতে ঘরবাড়ি তল্লাশি, অপহরণ, মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক, কারা ফটক থেকে পুনরায় গ্রেফতার করে নতুন মামলায় দেখিয়ে আটক, খুন-গুম-হত্যা, নারী ধর্ষণ ও ক্যাম্প স্থাপনের নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা এবং অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে কতিপয় সেনা কর্মকর্তাদের প্রমোশন বাণিজ্য করা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সমাবেশ থেকে তিনি, নবায়ন,মিঠুন রমেল চাকমাসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের কর্তৃক সকল হত্যাকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সকল ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধের দাবি জানান।
সংহতি বক্তব্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতা জাবের হোসেন জুবেল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন করছে। এটিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি পাহাড়ি জনগণের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সমাবেশে সোহবত শোভন বলেন, পাহাড়ে জাতিগত নিপীড়ন চলছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে নবায়ন চাকমাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের অভিপ্রায়ে সরকার সেখানে সমতল থেকে লক্ষাধিক বহিরাগত সেটলার বাঙালি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও তথ্য প্রচার সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রনেল চাকমা, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক জাবের হোসেন জুবেল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহবত শোভন। এছাড়াও উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকার।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে শাহবাগ ঘুরে এসে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন