সৌরভ চাকমা টিনটিনের ফেসবুক স্টেটাস নিয়ে সমালোচনার ঝড়

0
16

সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
Tintin fB stutas2সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুষার কান্তি চাকমার মেয়ের জামাই সংগীত শিল্পী সৌরভ দেয়া চাকমা ওরফে টিনটিন ও তার বন্ধু নবজিৎ চাকমা ওরফে রিকি গত ১৪ এপ্রিল অপহৃত (?) হয়েছেন বলে শুনা গেলেও খবরটি মিডিয়ায় প্রকাশ পায় ১৮ এপ্রিল রাতে। এর আগে কোন মিডিয়ায় এ খবরটি প্রকশিত হয়নি। যদিও সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধারের নামে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছিলো। যেদিনই এ ঘটনাটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় সেদিন রাতেই নাটকীয়ভাবে মুক্ত হন টিনটিন ও রিকি। মুক্তি পাবার পরপরই সৌরভ দেয়া চাকমা টিনটিন তার ফেসবুক ওয়ালে একটি সংক্ষিপ্ত স্টেটাস দিয়ে তার ফিরে আসার কথা বন্ধুদের জানান।

তিনি লেখেন: “i m back. thank u all who prayed for us. and special thanks to bangladesh army. i should hv joined the army these guys are awesome!”

সেনাবাহিনীর প্রশংসা সূচক তার এই স্টেটাস প্রদানের পরপরই সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। আদতেই অপহরণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে কি না এ নিয়ে সচেতন জুম্ম ফেসবুকাররা সন্দেহ করতে থাকেন। অনেকে এ ঘটনাকে সাজানো নাটক হিসেবে উল্লেখ করেন।

জে আর কার্বারী নামে এক ফেসবুকার তার স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেন- “তিনি সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসায় তার স্ট্যাটাস লিপিবদ্ধ করেছেন ! তাতে মনে হল তাঁর অপহরন ঘটনাটি সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সাজানো একটি নাটক যা পাহাড়ে এর আগেও দেখেছি !
তিনি আরো লেখেন, সৌরভ চাকমাকে সেনাবাহিনী উদ্ধার করেছে তা বড় কথা নয় ,সন্ত্রাসীরা বাঁচিয়ে ছেড়ে দিয়েছে তাই বড় কথা ! যেহেতু একটি প্রানের জন্যে একটি বুলেট এবং একটি মিনিটই যথেষ্ট ! তাঁকে ভুলে গেলে চলবেনা তার মুক্তির জন্যে অফ লাইন এবং অন লাইন ভিত্তিক জুম্মরা কি ভুমিকা পালন করেছে!”

টিনটিন চাকমা
সৌরভ দেয়া চাকমা টিনটিন

হুত্তুস্যে চাকমা মন্তব্য করেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী এবং RAB এর স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্যই এই অপহরনের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে।’

সুমেধ তাপস চাকমা মন্তব্য করেন, “এত ‘অল্পে’ তুষ্ট হয়ে সেনাবন্দনা আমিও করতে পারতাম। ৯৯’এ এক আর্মি মেজরের ফেয়ারওয়েল ফাংশনে যোগ দেয়ার বদৌলতে সিঙারা-সমুচা-ইন্দিয়ান হাজমোলা খাওয়ায় আমি চাটুকারগিরি করতে পারতাম। বাড়ির পাশে বিহারে মাইক লাগানোর জন্য সেলাম ঠুকতে পারতাম। জাস্ট এজ ইউ অল ডিড ইট!
আমি তা করতে পারি না। আমি আর তারা এক না। আমার আর তাদের মাঝে বস্তা বস্তা পচা লাশ, কাটা মাথা, বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পাহাড় পড়ে আছে। আমি চাইলে সুশীল হয়ে নেচেগেয়ে ঐ লাশের পাহাড় সরাতে পারব না।
আপনি কি করছেন সেটা আপনার বিষয় তবে সামস্টিকের জাতির ইতিহাসের প্রশ্নে আমি আপনাকে “ছাল ছাড়ানো মাংসের প্যাকেজ” বলছি। কারণ আপনি ভুলে গেছেন গতকালও আপনি সুজাতা, তুমাচিং’র জন্য প্রখর রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন; এখন জলপাই রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন! আগে আপনাকে বিশ্বাস করা উচিৎ হয়নি কিনা বলতে পারি না তবে এখন আমি আর করি না। রংঢং গিরগিটির পালটানো উচিৎ; মানুষের নয়।”

অজল দেওয়ান তার স্টেটাসে মন্তব্য করেন, “আচ্ছা মানলাম যে, টিনটিন বাবুকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছে আর বাংলা মায়ের দামাল ছেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেছে। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে স্ট্যাটাসও নাকি দিয়েছেন। ফেবু বন্ধু ও শ্রদ্ধেয় বড়ভাই JR Karbari বাবুর মাধ্যমে এই খবর জানতে পারলাম। টিনটিন বাবু এতই আবেগে তাড়িত হয়েছেন যে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ইচ্ছেও পোষণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করবেন না, আপনার প্রতি সদয় ব্যবহার করা হয়েছে মানে এই নয় যে স্বপ্রণোঃদিত হয়ে করছে। আপনার তারকাখ্যাতি হোক আর ব্যক্তিইমেজ হোক বা উপরওয়ালার চাপে হোক তা করতে বাধ্য হয়েছে। নইলে আপনার মতো শত শত ব্যক্তিকে তাদের পাত্তা দেয়ার কোন মানে নেই। কারণ, তাদের কাছে আপনি আমাদের মতই অচ্ছ্যুৎ।”

ডিশন চাকমা বাবু নামে এক ফেসবুকার মন্তব্য করে লেখেন, “টিনটিন সাহেব মনে হয় পাহাড়ের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ।সেনাবাহিনী সম্পর্কে উনি যে মন্তব্য করেছেন তাতে পাহাড়ের মানুষ ক্ষুব্ধ।উনার মতো একজন সেলিব্রেটির উচিত হয়নি সংবাদ সম্মেলনে এমন মূর্খামী করা।একদিকে পাহাড়ে সেনাবাহিনী বৃদ্ধিকরণ চলতেছে, র‌্যাব ব্যাটালিয়ন তৈরির পায়তারা চলতেছে।সেই সময় টিনটিন বাবুর এই বক্তব্য জলপাই রঙ ওয়ালাদেরকে সাহায্য করার সামিল নয় কি?
টিনটিন বাবুর উচিত নিজের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা।
উনি কি সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যা,ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগ,লুটপাট এর কথা জানতেন।এসব ইতিহাস জানলে যতই মূর্খ হোক কোনো পাহাড়ি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতে পারবে না।
টিনটিন বাবুকে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক রাজনৈতিক ক্লাশ নেওয়া উচিত।”

এখানে শুধুমাত্র কয়েকজনের মন্তব্য ও সমালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে আরো বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে টিনটিনের কোন বক্তব্য বা স্টেটাস পাওয়া যাচ্ছে না। যে স্টেটাসটি নিয়ে এ সমালোচনা ঝড় বইছে সেটিও আর তাঁর ওয়ালে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে নিয়ে এ সমালোচনার ঝড় এখন আর শুধু ফেসবুকে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন একটি আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.