১৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
ঢাকা : ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ১৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইউপিডিএফ ঢাকা ইউনিটের উদ্যোগে পার্টি অফিসে এক আলোচনা সভা, ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী ও প্রীতি ভোজ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ), বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।
সভায় ২৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে বিশেষ একটি কবিতা লিখে আবৃত্তি করে শোনান পিসিপি ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়েল ত্রিপুরা।
সভা পরিচালনা করেন পিসিপি ঢাকা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন চাকমা।
সভায় বক্তারা বলেন, আজকের এই দিনটি হচ্ছে আনন্দের দিন, উৎসবের দিন; কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই পরিস্থিতি এখনো তৈরী হয়নি, অধিকার এখনো অর্জন করতে পারিনি।
বক্তারা আরো বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে গেলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে কাজ করতে হবে। ছাত্র-যুবক-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ লড়াই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরতে হবে। এ লড়াই হতে হবে নীতি আদর্শের ভিত্তিতে। শত্রুর কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হলে শত্রুর চাইতেও বেশী দৃঢ়তা ও কঠিন পণ থাকতে হবে। ছাত্র যুবকরা জেগে উঠলে, আন্দোলনের সাথে যুক্ত হলে, তাহলে এ শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বক্তারা আরো বলেন, “সরকার আমাদেরকে উপজাতি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে তাচ্ছিল্য করছে। তার মানে হলো তোমরা ক্ষুদ্র, কম, উপজাতি ; সুতরাং তোমরা ওভাবে থাক। সরকারের পলিসি হলো একটা চাকুরী নাও, এই করো, ওই করো ; কিন্তু তোমরা রাজনৈতিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করো না। তোমরা রাজনৈতিক অধিকারের দাবীতে পোস্টার টাঙিও না, ফেস্টুন ব্যানার টাঙিও না; ওভাবে স্যালুট দিও না, বিপ্লবী উদ্দীপনামূলক গান শুনো না, কারণ এসব করলে-শুনলে তোমাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও আকাঙ্খা জাগ্রত হবে। তখন তোমরা ঐ রুদ্ধ কোণায় অবহেলিত হয়ে, বুটের লাথি খেয়ে পড়ে থাকবে না। তোমরা ওসি, সুবেদার, মেজর, কর্ণেলদের পাত্তা দেবে না।”
এই শক্তি যাতে জনগণের মধ্যে জাগ্রত না হয় সেজন্য সরকার শাসকশ্রেণী শুধু সেনা-পুলিশ দিয়ে নয়, পত্রিকা টেলিভিশসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। অধিকার বঞ্চিত করে রাখার জন্য এভাবে যুগ যুগ ধরে ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে অবশ করে রাখা হয়েছে। একসময় যারা জেগে উঠেছিল তাদেরকে সরকার ললিপপ ধরিয়ে দিয়ে বশিভূত করেছে। তাদের পর্বটা শেষ হয়ে গিয়েছে। যারা এখন নতুন করে জেগেছে তাদের দায়িত্ব হলো অন্যদের জাগিয়ে তোলা, কারণ যে রাস্তা চেনে তাকে অন্যদের পথ দেখিয়ে নিতে হয়।
বক্তারা আরো বলেন, সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লাগানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ভোর রাতে নেমে ইউপিডিএফ-এর পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ছিঁড়ে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে সেনাবাহিনী অন্যদের পোস্টার কিন্তু ছিঁড়ে দেয় না। পাহাড়ে বিভিন্ন কোম্পানী ও বিজ্ঞাপনি সংস্থাও পোস্টারিং করে, এমনকি জনসংহতি সমিতিও করে থাকে। কিন্তু সেনারা সেসব ছিঁড়ে দেয় না। ইউপিডিএফ -এর পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার দেখলে ক্যাপ্টেন, মেজর, সিওদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তার অর্থহলো ইউপিডিএফ –এর পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারগুলো তাদের বুকে একেকটা শেল বা বর্শার মতো বিঁধছে, আঘাত দিচ্ছে।
বক্তরা আরো বলেন, দুনিয়ার অনেক আন্দোলন হয়েছে এবং ব্যর্থও হয়েছে, কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার পর আন্দোলনের সঠিক পথ অবলম্বনের কারণে আবার সফলও হয়েছে, বিজয় লাভ করেছে।
এছাড়াও বক্তারা পূর্ণস্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন করতে যেয়ে যারা কারাগারে আটক রয়েছেন, নিপীড়ন–নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরও স্মরণ করেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক সংগীত বাজানোর মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। এরপর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় উৎসবমূখর পরিবেশে বিপ্লবী সংগীত বাজানো হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশে লড়াই সংগ্রামের ডক্যুমেন্টারি ও গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার