।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
আগামী ২০ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজের অগ্রগ্রামী সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৮৯ সালের ২০ মে ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আত্মপ্রকাশ করে। ৪ঠা মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা নামে গঠিত পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা ঢাকায় মিলিত হন এবং স্ব স্ব সংগঠনের বিলোপ ঘটিয়ে একটি মাত্র ছাত্র সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এভাবেই সেদিন (২০ মে ১৯৮৯) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জন্ম লাভ করে। এর পরদিন অর্থাৎ ২১ মে ঢাকায় রাজপথে প্রথম বারের মতো পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ব্যানারে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদে ঐতিহাসিক মৌন মিছিল বের করা হয়।
লংগদু গণহত্যার রক্তবীজ থেকে জন্ম নেয়া পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারহারা জনগণের আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে পরিচালিত গণআন্দোলন মোকাবিলার জন্য সরকার বিভিন্ন দমনমুলক নীতি গ্রহণ করে। এর মধ্যে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের শত শত নেতা কর্মী ও সমর্থককে আটক করা, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ঝুলিয়ে দেয়া, মিছিল-সমাবেশে বাধা দেয়া, সেটলারদের দিয়ে চরম প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন খাড়া করে লেলিয়ে দেয়া, বখাটে ও মাদকাসক্ত পাহাড়ি যুবকদের দিয়ে মুখোশ বাহিনী গঠন ইত্যাদি। কিন্তু এত বাধা বিপত্তি ও দমন পীড়ন সত্ত্বেও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জনগণের আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে পরিণত হয়।
কিন্তু ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রাক্কালে সন্তু লারমা ও জনসংহতি সমিতির কতিপয় নেতা টাকা ও নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সুবিধাবাদী অংশটিকে নিজের পক্ষে বাগিয়ে নেন ও পরে তাদেরকে দিয়ে দুই নাম্বারী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন করেন। এটি সরকারের লেজুড় সংগঠনে পরিণত হয়।
অপরদিকে, মূলধারার পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে আন্দোলনরত সংগঠন পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাথে যৌথভাবে ঢাকায় এক পার্টি প্রস্তুতি সম্মেলন আয়োজন করে এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ইউপিডিএফ-এর সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়ে জনগণের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত রয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২০ মে ২০১৬ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বানছড়া (আমতলি) স্কুল মাঠে ছাত্র সমাবেশ ও র্যালির আয়োজন করেছে।
এ উপলক্ষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ একটি পোস্টার প্রকাশ করেছে। এবারের পোস্টারের মূল শ্লোগান হচ্ছে-” মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসন-ই জাতিসত্তার বিকাশ ও অস্তিত্ব রক্ষার চাবিকাঠি!”
এতে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে-” পার্বত্য চট্টগ্রামে বিপন্ন মা-বোনদের নিরাপত্তা-সম্ভ্রম রক্ষার্থে প্রতিবাদী ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ হও, বাবুছড়ায় উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল দুর্দশাগ্রস্ত শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসো!”।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সফল করতে পিসিপি’র নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া দেওয়াল লিখন, ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড লেখা ও বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিংয়ের কাজ চলছে বলে পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
সমাবেশ ও র্যালিতে অংশগ্রহণ করার জন্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
—————————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।