ফেসবুক থেকে

২৮ বছরের চুক্তি অপূর্ণ: জেএসএস-এর দায় এড়ানোর রাজনীতি আর কতদিন?

0
শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন সন্তু লারমা ও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সংগৃহিত ছবি

মাইকেল চাকমা



আগামীকাল ২ ডিসেম্বর, পার্বত্য চুক্তির বয়স ২৮ বছর পূর্ণ হবে। অর্থাৎ, যৌবন পার হয়ে ক্রমান্বয়ে প্রৌঢ়ত্বে পা রাখতে যাচ্ছে চুক্তিটি। এতগুলো বছর পরও চুক্তি এখনো পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি- দাবি জেএসএস-এর। তাদের বক্তব্য- মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, তাও চুক্তির মূল বা গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বাদ দিয়ে।

এই চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার আক্ষেপ কিংবা আলোচনা কেবল চুক্তি দিবসকে ঘিরেই হয়ে থাকে। এরপর আর কারোর কোনো খোঁজ থাকে না– না সরকারের, না জনসংহতি সমিতির! চুক্তির অন্যতম প্রধান পক্ষ জনসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়নে যতটুকু তৎপর হওয়ার কথা, সে তৎপরতা গত ২৮ বছরে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। সমিতির নেতারা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে শিকেয় তুলে কেবল আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে বসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা উপভোগ, বিভিন্ন রকমের ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা ও সামাজিক মোড়লগিরিতে ডুবে রয়েছেন।

সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুও জানে- কান্নাকাটি না করলে জন্মদাত্রী মা পর্যন্ত দুধ খাওয়ায় না। সে এও জানে যে- জন্ম নেওয়াটাই শেষ নয়, মায়ের দুধকেও আদায় করে নিতে হয়। কিন্তু জেএসএস নেতারা ব্যতিক্রম প্রজাতির। জনসংহতি সমিতি এমন একটি সংগঠন, যার নেতারা বিশ্বাস করে- চুক্তিতে সই করেই তারা দায়মুক্ত হয়েছে। এরপর আর কিছুই করতে হবে না; সরকার নিজ থেকেই দু’হাত ভরে চুক্তিটি তাদের মুখে তুলে দেবে! আর তারা শুধু বগল বাজিয়ে শুয়ে-বসে খাবে আর ঘুমাবে! অন্যদিকে তারা সাধারণ জনগণের সামনে নিজেদের ফাঁপা বীরত্বগাঁথা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এমনভাবে প্রচার করে- যেন তারা দুনিয়ার একটি অংশ ছিনিয়ে এনেছে।

নিজেদের ব্যর্থতাকে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া, প্রায় তিন দশক ধরে এক নাগাড়ে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করার ফ্যাসিবাদী অভিলাষ, বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার মতো আত্মপ্রতিষ্ঠার পেটনীতির চর্চা, সেনা-শাসক শ্রেণির এজেন্ডা বাস্তবায়নে বি-টিম হয়ে কাজ করা- এটাই জেএসএস-এর চুক্তি-পরবর্তী রাজনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেএসএস নেতারা বিগত আটাশ বছর ধরে এটাই করে আসছেন! শুধু তাই নয়, এর বাইরেও তাদের আরেকটি গণবিরোধী নীতি রয়েছে- তা হলো ‘সরকারপন্থী’ নীতি।

জনসংহতি সমিতির অধঃপতিত, লেজুড়বৃত্তি, সুবিধাবাদী ও আত্মপ্রতিষ্ঠার ভ্রান্ত রাজনীতি এবং সেনা-শাসক শ্রেণির প্রতি নতজানু তাঁবেদারি- দীর্ঘ আটাশ বছর পরও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়! এ সময়ের মধ্যে একবারের জন্যও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে পারেনি জেএসএস নেতৃত্ব। তারা সবসময় শাসকগোষ্ঠীর পোষ্যপুত্র হয়ে থেকেছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নে নতজানু ও তোষণমূলক রণকৌশল অবলম্বন করেছে।

পার্বত্য চুক্তি একটি অসম্পূর্ণ চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ঘটেনি। চুক্তিটির আইনগত বৈধতাও নেই এবং তা বাস্তবায়নের সময়সীমাও নির্ধারিত নয়। তথাপি, চুক্তিতে শত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও কিছু ইতিবাচক দিক অবশ্যই রয়েছে। এই চুক্তিকে দুর্বল ও অপর্যাপ্ত অভিহিত করে ইউপিডিএফ প্রত্যাখ্যান করলেও বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি করেনি; বরং বাস্তবায়নে সহযোগীতা দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষাণা দিয়েছিল বারবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুরু থেকে সমিতির নেতার হেঁটেছিল ইতিহাসের উল্টো যাত্রায়, আত্মঘাতি পথে! এই আত্মঘাতী ও গণবিরোধী রাজনীতি থেকে যদি জনসংহতি সমিতি বেরিয়ে আসতে না পারে, তাহলে আগামী শত বছর পরও পার্বত্য চুক্তি নামক ‘মূলা’ ঝুলতেই থাকবে এবং জেএসএস নেতৃত্ব প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার পেছনে ছুটতে থাকবে।

লেখা সংগ্রহ: মাইকেল চাকমার ফেসবুক পোস্ট



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More