নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ গত রবিবার রাঙামাটির কুদুকছড়ি আবাসিক এলাকায় সেনাসৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের হামলা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণের পর নানিয়াচর আর্মি জোনের মেজর ইমরান ঘটনাস্থলে গিয়ে হাস্যমুখে উপস্থিত লোকজনকে বলেন, ‘‘তোমাদের বলি নাই ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা এসেছে! মিটিঙেও তোমাদের সতর্ক থাকতে বলেছিলাম।”
এ সময় কুদুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কানন চাকমাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ঘটনার দুই দিন আগে অর্থাৎ ১৬ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার বিকালে মেজর ইমরান ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী আবাসিক স্কুলে স্থানীয় গণ্যমান্য বক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন। সে সভায় উপস্থিত মুরুব্বীদের তিনি বলেছিলেন, “আমাদের কাছে তথ্য আছে কুদুকছড়ি এলাকায় ভারতীয় উগ্রপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা এসেছে। তারা কোথায় আছে তা আপনারা আমাদেরকে খবর দিবেন এবং সতর্ক থাকবেন। মূলত সতর্কতা দেওয়ার জন্যই আজকের এই সভা”। মিটিং-এর আলোচ্য বিষয়টি তারা ফোনে চেয়ারম্যান কানন চাকমাকেও অবগত করেন। সেদিন সভা শেষে সেনাবাহিনী চলে গেলেও সন্ধ্যায় আবার তারা কুদুকছড়ি আবাসিক এলাকায় চলে আসে এবং রাত ৯টা পর্যন্ত সারা গ্রাম টহল দেয়। লোকজন যাকে নাগাল পায়, তাকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়।
দুই নেত্রীর অপহরণ এবং ছাত্র মেসে অগ্নি সংযোগের ঘটনা যে সেনাবাহিনী দ্বারা পূর্ব পরিকল্পিত তা মেজর ইমরানের উক্ত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে সকাল ৯.১৫ টার দিকে। গুলি বর্ষণ ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই চেয়ারম্যান কানন চাকমা স্থানীয় কুদুকছড়ি আর্মি ক্যাম্পে সহযোগিতা চেয়ে ফোন করেন বলে জানান। কিন্তু তাৎক্ষণিক কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ক্যাম্প থেকে গাড়ীতে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে মাত্র ২/৩ মিনিট লাগার কথা। অথচ ঘটনার ৩ ঘন্টার বেশী সময় পার হওয়ার পর ১২.৩০টার দিকে মেজর ইমরানের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান।
মেজর ইমরানের সেদিনের সভায় উপস্থিত থাকা দুই ইউপি সদস্য সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, সেনাবাহিনী চাইলে অন্তত অপহরণের ঘটনাটি রোধ করতে পারতো। কিন্তু তারা তা চায়নি বলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হয়ে সন্ত্রাসীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।
সেদিনের সভায় উপস্থিত আরো এক ইউপি সদস্য বলেন, সেনাবাহিনী ভারতীয় বিদ্রোহীদের জুজুর ভয় দেখানোর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুখোশদের দিয়ে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। আবাসিক এলাকায় হামলা, অপহরণ এবং ছাত্র মেসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে।
মেজর ইমরানের পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন নানিয়ারচর জোন কমান্ডার বাহলুল আলম। তিনি ঘটনার ব্যাপারে দায়ী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পুড়ে যাওয়া বাড়িতে ‘কিছু উদ্ধারের’ আশায় বাঁশ দিয়ে তল্লাশী চালান। কিন্তু তিনি কিছুই ‘উদ্ধার’ করতে সক্ষম হননি। এই বাহালুল আলমের বিরুদ্ধে পিসিপি নেতা রমেল চাকমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, সর্বশেষ তথ্য মতে, নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা অপহৃত মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে মংলা থেকে গত রাতে নানিয়ারচর সদর থেকে দেড় কি.মি. উত্তর-পশ্চিমের গ্রাম গুইল্যাছড়িতে সরিয়ে নিয়েছে।
——————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।