খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। ‘সরকার আলুটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন নয়, গঠন করছে পাহাড়িদের জন্য বিশেষ ডেথ জোন। প্রস্তাব গ্রহণের আগে আলুটিলাবাসীর মতামত নেয়া হয়নি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্মিক ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কেও গবেষণা করা হয়নি।’
আজ রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ‘প্রয়োজনে রক্ত দেবো, তবু ভিটে-জমি ছাড়বো না, বিশেষ পর্যটন জোনের নামে আলুটিলায় ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র রুখো’ এই শ্লোগানে আয়োজিত আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির প্রথম সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
সম্মেলনে আলুটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন গঠনের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে অবিলম্বে উক্ত প্রস্তাব বাতিলসহ সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে।
আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব জয়ন্ত ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সাগর ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রসেনজিত ত্রিপুরা, আলুটিলা ভূমি রক্ষা ছাত্র জোটের আহ্বায়ক তনয় ত্রিপুরা, পিসিপি চবি শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রূপন চাকমা, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য দোতারা বালা ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি চাইহ্লাউ মারমা। সম্মেলনটি রিছাং ঝর্ণার রাস্তার মুখে সকাল ৮:৩০ টা থেকে সকাল ১০:০০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার আট শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা বলেন, ‘আমাদের পিছু হটার আর কোন জায়গা নেই। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যে জমিতে আমরা যুগ যুগ ধরে বাস করে আসছি, যে মাটির সাথে আমাদের পূর্বপুরুষরা মিশে রয়েছেন, যে জমিতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলাই, যে জমি আমাদের প্রাণস্বরূপ, সে জমি থেকে উৎখাত হওয়া মানেই আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া। তাই প্রতিরোধ করা ছাড়া আমাদের সামনে আর অন্য কোন পথ খোলা নেই।’
তারা বলেন, ‘প্রস্তাবটি গ্রহণের আগে আমাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা করা হয়নি ও আমাদের মতামত নেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, প্রকল্প বিষয়ে সরকারের মধ্যে যে চিঠি চালাচালি হয়েছে সেখানে আমাদের জমিগুলো ‘খাস’ দেখানো হয়েছে। তৃতীয়ত, পর্যটন জোন গঠন করা হলে তার অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্মিক ও পরিবেশগত প্রভাব কিরূপ হবে সে সম্পর্কে কোন গবেষণা করা হয়নি। এ কারণে আমরা সরকারের এই সর্বনাশা পর্যটন জোন গঠনের প্রস্তাবের বিরোধীতা করতে বাধ্য হচ্ছি।’
পর্যটন শিল্পকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করে, বক্তারা আরো বলেন, ‘আলুটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন গঠন করা হলে তিনটি মৌজার ২১টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে, সামাজিকভাবে, পরিবেশগতভাবে এবং মনস্তাত্মিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সরকার আলুটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন নয়, গঠন করছে পাহাড়িদের জন্য বিশেষ ডেথ জোন।’
এছাড়া সম্মেলনে আলুটিলাবাসীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবাদী কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমর্থন আদায়ের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো; প্রস্তাবিত পর্যটন জোনের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক গ্রামে ভূমি রক্ষা কমিটি গঠন এবং আন্দোলন পরিচালনার জন্য ‘আলুটিলা ভূমি রক্ষা তহবিল’ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত পাঠ করেন আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য রিতা রোয়াজা।
সরকারের কাছে তুলে ধরা অন্য দাবিগুলো হলো, আলুটিলার স্থায়ী বাসিন্দাদের দালিলিকভাবে জমির বন্দোবস্তী প্রদান করা, আলুটিলা এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলোচনা করে এমন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে যাতে কাউকে নিজ জমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হতে না হয়, আলুটিলায় ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছের বাগান সৃজনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিকসহ সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা।
সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য আনন্দ চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শান্তিপ্রভা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলাশাখার দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি, প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজ জেলা শাখার সভাপতি উক্যচিং মারমা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক টেতুসা ত্রিপুরা এবং ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা।
আলুটিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য রিতা রোয়াজা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।